Skip to main content

004 | An-Nisa (আন-নিসা)


| আমরা সবসময় মনে রাখি | We Always Remember |

  • যখন একজন মানুষ মারা যায়, তার সব কাজ শেষ হয়ে যায় , তিনটি ব্যতিক্রম ছাড়া: সদকা জারিয়া (চলমান দান) , এমন জ্ঞান যা থেকে উপকার পাওয়া যায়, এবং একটি সৎ সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে । | মুহাম্মদ (সাঃ) ; হাদিস - সহিহ মুসলিম | When a person dies, his works end, except for three: ongoing charity, knowledge that is benefited from, and a righteous child who prays for him. | Prophet Mohammed (PBUH); Hadith - Sahih Muslim |

  • যে ব্যক্তি ভাল কাজের জন্য সুপারিশ করবে, তার জন্য তাতে (সাওয়াবের) অংশ আছে এবং যে মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে, তার জন্য তাতে অংশ আছে । আর আল্লাহ সব কিছুর উপর নজর রাখেন । | সূরাঃ ৪ , আন-নিসা , আয়াতঃ : ৮৫ | Whoever intercedes for a good cause will have a reward therefrom; and whoever intercedes for an evil cause will have a burden therefrom. And ever is Allah, over all things, a Keeper. | Surah 4 , An-Nisa , Verse: 85 |


আয়াত সংখ্যা : ১৭৬ ; মদীনায় অবতীর্ণ
Total Verses : 176 ; Revealed in Madina

সূরা আন-নিসা (“নারীরা”) হলো মদিনায় অবতীর্ণ দীর্ঘ সূরা যার আয়াত সংখ্যা ১৭৬। এতে ইসলামী সমাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন দিকের নির্দেশনা রয়েছে—যেমন পরিবার, বিবাহ-বিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, মহিলা ও শিশুদের অধিকার, সুপ্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, যুদ্ধনীতি ইত্যাদি। এটি সমাজের মেরুদণ্ড প্রতিষ্ঠায়, ন্যায় ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে, এবং মানবতা ও ঈমানের ওপর ভিত্তি করে সমাজ গড়তে আল্লাহর নির্দেশাবলী বহন করে।

Surah An-Nisa (“The Women”) is a long Madinan surah consisting of 176 verses. It provides guidance on various aspects of Islamic social and personal life—such as family matters, marriage and divorce, inheritance, the rights of women and children, good governance, justice, and rules of warfare. This surah conveys Allah’s instructions for establishing the backbone of society, maintaining justice and harmony, and building a community based on faith and humanity.


In the name of Allah, the Most Gracious, the Most Merciful
আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময়, পরম দয়ালু


আয়াত ০৪ : ১

  • হে মানুষ !
    • তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের তাকওয়া অবলম্বন কর—
    • যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একজন মানুষ (আদম) থেকে,
    • আর তার মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তার সঙ্গিনী (হাওয়া),
    • এবং এ দু’জনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন অনেক নর ও নারী।
    • তোমরা ভয় করো সেই আল্লাহকে,
    • যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট নিজেদের অধিকার দাবী করো,
    • আর আত্মীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারেও সাবধান হও।
    • নিশ্চয়ই আল্লাহ সব সময়ই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধান করছেন।

[ এই আয়াতের শুরুতেই মানবজাতিকে তাকওয়া—অর্থাৎ আল্লাহভীতি ও সচেতন জীবন যাপনের আহ্বান জানানো হয়েছে । অর্থাৎ, মানুষ যেন আল্লাহকে ভয় করে সচেতনভাবে, দায়িত্বশীল ও ইনসাফপূর্ণ জীবন যাপন করে।

  • আল্লাহ সবাইকে এক ব্যক্তির (আদম আঃ) থেকে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর থেকেই সৃষ্টি করেছেন তাঁর স্ত্রী (হাওয়া আঃ),এবং তাঁদের দুজন থেকে পৃথিবীজুড়ে বহু পুরুষ ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন।
  • এর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে,সমগ্র মানবজাতি এক মূল থেকে এসেছে — তাই জাতি, বর্ণ বা গোত্রভেদে কেউ কারও চেয়ে বড় নয়।
  • আল্লাহ আমাদের আরও তাগিদ দেন —
    • আমরা যেন আত্মীয়তার সম্পর্কের প্রতি যত্নবান হই,
    • এবং পারস্পরিক অধিকার আদায় করতে গিয়ে তাঁর ভয়কে ভুলে না যাই।
  • শেষে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: আল্লাহ আমাদের সবকিছু দেখেন ও জানেন—তিনি সবকিছুর হিসাব নেবেন । ]

Verse 04 : 1

  • O mankind, fear your Lord, who created you from one soul and created from it its mate and dispersed from both of them many men and women. And fear Allah, through whom you ask one another, and the wombs. Indeed Allah is ever, over you, an Observer.

আয়াত ০৪ : ২

  • আর ইয়াতীমদেরকে
    • তোমরা তাদের ধন-সম্পদ বুঝিয়ে দাও,
    • এবং ভালো জিনিস রেখে তাদেরকে খারাপ জিনিস দিও না,
    • আর তোমাদের সম্পদের সাথে তাদের সম্পদ মিশিয়ে গ্রাস করো না;
    • নিশ্চয় এটা মহাপাপ ।

Verse 04 : 2

  • And give to the orphans their properties and do not substitute the defective [of your own] for the good [of theirs]. And do not consume their properties into your own. Indeed, that is ever a great sin.

আয়াত ০৪ : ৩

    • আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তোমরা এতিমদের ব্যাপারে ইনসাফ করতে পারবে না,
    • তবে তোমাদের জন্য যেসব নারী ভালো লাগে, তাদের মধ্যে দুই, তিন বা চারজনকে বিয়ে করো।
    • কিন্তু যদি আশঙ্কা কর যে, তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার বজায় রাখতে পারবে না,
    • তবে একজনই বিবাহ করো,
    • অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত (দাসী) যারা আছে, তাদেরকে। এটাই হলো বেশি ন্যায়সঙ্গত—অবিচারে না জড়ানোর জন্য।

[ এই আয়াতটি মূলত বিবাহ, ন্যায়বিচার এবং ইয়াতীমদের অধিকার নিয়ে আলোচনা করে ।

  • ইয়াতীম মেয়েদের সাথে ন্যায়বিচার : যদি কেউ মনে করে যে, ইয়াতীম মেয়েকে বিয়ে করলে তার হক ঠিকভাবে আদায় করতে পারবে না (যেমন: সম্পদে অনিয়ম, ভালো ব্যবহার না করা), তাহলে তা না করে অন্য নারীদের বিয়ে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
  • একাধিক বিবাহের অনুমতি : ইসলাম পুরুষদের একজন, দুই, তিন অথবা চারজন নারীকে বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছে — তবে এটি শর্তসাপেক্ষ, যেমন: ন্যায়বিচার ও সমতা বজায় রাখতে হবে।
  • ন্যায়বিচারে অক্ষম হলে একজনই যথেষ্ট : যদি কেউ মনে করে যে একাধিক স্ত্রীকে ন্যায়বিচার করে চলা সম্ভব হবে না, তবে শুধুমাত্র একজন স্ত্রী গ্রহণ করাই উত্তম । এতে অন্যদের প্রতি অন্যায় বা অবিচার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
  • দাসী গ্রহণের প্রসঙ্গ : সে সময় সমাজে দাস-দাসীর প্রথা ছিল। যারা বৈধভাবে অধিকারভুক্ত ছিল, তাদেরকে বিয়ে করা বা দায়িত্ব নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। ]

Verse 04 : 3

  • And if you fear that you will not deal justly with the orphan girls, then marry those that please you of [other] women, two or three or four. But if you fear that you will not be just, then [marry only] one or those your right hand possesses. That is more suitable that you may not incline [to injustice].

[ This verse primarily discusses marriage, justice, and the rights of orphans.

  • Justice with orphan girls : If someone fears that they will not be able to deal justly with orphan girls (for example, failing to protect their rights or mistreating them), then instead of marrying them, they are instructed to marry other women whom they like.
  • Permission for multiple marriages: Islam permits a man to marry one, two, three, or four women, but this permission comes with the condition that he must maintain justice and equality among them.
  • If unable to be just, one wife is enough : If someone fears that he will not be able to treat multiple wives justly and fairly, then it is better to marry only one wife. This reduces the chance of injustice or unfair treatment toward others.
  • Mention of slave women : At that time, the practice of slavery existed in society. Those who were legally under one’s guardianship could be married or taken responsibility for according to Islamic law. ]

আয়াত ০৪ : ৪

    • আর নারীদেরকে তাদের মহর (বিয়ের দেনমোহর) সদিচ্ছায় দিয়ে দাও।
    • আর যদি তারা নিজের ইচ্ছায় সেই মহরের কিছু অংশ তোমাদেরকে ছেড়ে দেয়,
    • তবে তা সন্তুষ্টচিত্তে খাও, তা তোমাদের জন্য হালাল ও কল্যাণকর।

[ এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নারীর অধিকার রক্ষা ও সম্মানজনকভাবে দেনমোহর প্রদান করার নির্দেশ দিয়েছেন:

  • দেনমোহর (মহর) স্ত্রীর একটি প্রাপ্য অধিকার — এটি করুণা নয়, বরং বিয়ের সময় স্বামীর জন্য ফরজ দায়িত্ব — একটি উপহার বা নির্ধারিত অর্থ।
  • আয়াতে ব্যবহৃত “نِحْلَةً নিহলাহ” শব্দটি বোঝায় সম্মানসূচক উপহার বা হক যা খুশিমনে ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রদান করা হয়।
  • যদি স্ত্রী স্বতঃস্ফূর্তভাবে মহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয় বা উপহারস্বরূপ ফিরিয়ে দেয়, তবে স্বামী তা সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করতে পারে — এতে কোনো পাপ বা অপরাধ নেই। ]

Verse 04 : 4

  • And give the women [upon marriage] their [bridal] gifts graciously. But if they give up willingly to you anything of it, then take it in satisfaction and ease.

আয়াত ০৪ : ৫

    • আর তোমরা অবিবেচক বা অল্পবুদ্ধিসম্পন্নদের হাতে তাদের সম্পদ তুলে দিও না,
    • সে সম্পদই তো, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের জীবিকা ও জীবনের ভারসাম্য স্থাপন করেছেন।
    • বরং সেই সম্পদ থেকেই তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী খাওয়াও, পরাও ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করো।
    • আর তাদের সঙ্গে সদয়, সম্মানজনক ও ভদ্রভাবে কথা বলো।

[ এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সমাজের অল্প বুদ্ধিমান বা দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা না থাকা ব্যক্তিদের সম্পদ সুরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন।

  • “সুফাহা” অর্থ—যারা মূর্খ, বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দুর্বল বা সম্পদ পরিচালনায় অযোগ্য (যেমন: শিশু, মানসিকভাবে দুর্বল)। তাদের হাতে এমন সম্পদ তুলে দিও না, যা তারা নষ্ট করে ফেলতে পারে।
  • সম্পদ আল্লাহ মানুষের জীবিকা ও জীবনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য দিয়েছেন, তাই তা অপচয় হওয়া উচিত নয়।
  • যদিও তাদের হাতে সম্পদ দেওয়া যাবে না, কিন্তু তাদের জীবনযাপনের জন্য সেই সম্পদ থেকে খাওয়াতে ও পরাতে হবে।
  • এছাড়া তাদের সঙ্গে সদয় ও সম্মানজনক আচরণ করতে হবে, যেন তারা মর্যাদাপূর্ণ বোধ করে। ]

Verse 04 : 5

  • And do not give the weak-minded your property, which Allah has made a means of sustenance for you, but provide for them with it and clothe them and speak to them words of appropriate kindness.

আয়াত ০৪ : ৬

    • এতিমদের পরীক্ষা করো যতক্ষণ না তারা বিয়ের উপযোগী বয়সে পৌঁছায়।
    • আর যদি তাদের মধ্যে বুঝদারির লক্ষণ দেখতে পাও, তবে তাদের সম্পদ তাদেরকে বুঝিয়ে দাও।
    • তোমরা অযথা খরচ করে বা তারা বড় হয়ে যাবে—এই আশঙ্কায় তাড়াহুড়া করে সেই সম্পদ খেয়ে ফেলো না।
    • যে অভিভাবক স্বচ্ছল, সে যেন (এতিমের সম্পদ থেকে) নিজেকে দূরে রাখে,
    • আর যে অভাবী, সে শালীনভাবে প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রহণ করতে পারে।
    • আর যখন তাদের সম্পদ তাদের হাতে তুলে দাও, তখন সাক্ষী রেখে দাও।
    • আল্লাহ হিসাব গ্রহণের জন্য যথেষ্ট।

[ এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা এতিমদের সম্পদ পরিচালনার নিয়ম ও ন্যায়বিচারের নির্দেশনা দিয়েছেন:

  • এতিমরা বড় হয়ে বিবাহযোগ্য বয়সে পৌঁছালে, তাদের বুঝদার কিনা তা যাচাই করতে হবে।
  • যদি দেখা যায় তারা দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ হয়েছে, তাহলে তাদের সম্পদ তাদের হাতে বুঝিয়ে দিতে হবে।
  • অভিভাবক যেন:
    • অতিরিক্ত খরচ করে এতিমের সম্পদ নষ্ট না করে,
    • কিংবা এতিম বড় হয়ে গেলে দিতে হবে—এই ভয় থেকে আগেই সেটা ভোগ না করে।
  • যদি অভিভাবক ধনী হয় — সে যেন এতিমের সম্পদ থেকে কিছু না নেয়।
  • আর যদি সে গরিব হয় — সে শালীনভাবে ও প্রয়োজনের পরিমাণে গ্রহণ করতে পারে।
  • সম্পদ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় সাক্ষী রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন ভবিষ্যতে কোনো বিরোধ না হয়।
  • আল্লাহই যথেষ্ট হিসাব গ্রহণকারী — কারো অধিকার খেয়াল না রাখলে, একদিন জবাবদিহি করতেই হবে। ]

Verse 04 : 6

  • And test the orphans [in their abilities] until they reach marriageable age. Then if you perceive in them sound judgement, release their property to them. And do not consume it excessively and quickly, [anticipating] that they will grow up. And whoever, [when acting as guardian], is self-sufficient should refrain [from taking a fee]; and whoever is poor - let him take according to what is acceptable. Then when you release their property to them, bring witnesses upon them. And sufficient is Allah as Accountant.

আয়াত ০৪ : ৭

    • পুরুষদের জন্য রয়েছে একটি অংশ, যা তাদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়রা রেখে গেছেন ।
    • আর নারীদের জন্যও রয়েছে একটি অংশ, যা তাদের পিতা-মাতা ও আত্মীয়রা রেখে গেছেন —
    • তা হোক অল্প কিংবা বেশি —
    • এই অংশটি নির্ধারিত ।

[ এই আয়াতটি ইসলামী উত্তরাধিকার ব্যবস্থার একটি মূলনীতি ঘোষণা করে । ]


Verse 04 : 7

  • For men is a share of what the parents and close relatives leave, and for women is a share of what the parents and close relatives leave, be it little or much - an obligatory share.

আয়াত ০৪ : ৮

    • আর সম্পত্তি বন্টনকালে আত্মীয়,
    • ইয়াতীম এবং অভাবগ্রস্ত লোক উপস্থিত থাকলে
    • তখন তাদেরকে সেই সম্পদ থেকে কিছু দান করো,
    • এবং তাদের সঙ্গে সদাচরণপূর্ণ কথা বলো।

[ এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা উত্তরাধিকার বণ্টনের সময় উপস্থিত দরিদ্র ও অসহায় আত্মীয়দের প্রতি সদাচরণ ও দানের নির্দেশ দিয়েছেন:

  • যখন সম্পদ বণ্টন করা হয়, তখন আত্মীয়, এতিম বা গরিব কেউ উপস্থিত থাকলে — তাদের কিছু দান করে দেওয়া উচিত, যদিও তারা উত্তরাধিকারভুক্ত না হয়।
  • কারণ, তারা হয়তো উত্তরাধিকার পাওয়ার অধিকারী নয়, কিন্তু উপস্থিত হয়ে অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকলে তাদের কিছু দেওয়া নৈতিক দায়িত্ব।
  • শুধু সম্পদ নয়, তাদের প্রতি ভদ্র, সম্মানজনক ও সান্ত্বনাপূর্ণ ভাষায় কথা বলাও ইসলামের নির্দেশ । ]

Verse 04 : 8

  • And when [other] relatives and orphans and the needy are present at the [time of] division, then provide for them [something] out of the estate and speak to them words of appropriate kindness.

আয়াত ০৪ : ৯

    • আর তারা যেন ভয় করে,
    • যদি নিজেরা এমন সন্তান রেখে যেতো যারা দুর্বল,
    • তাহলে তারা নিশ্চয় তাদের ব্যাপারে চিন্তিত হতো।
    • তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে
    • এবং সঠিক ও ন্যায়ের কথা বলে।

[ এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা আমাদের বিবেককে জাগ্রত করে বলেন:

  • যারা এতিমের সম্পদ বণ্টন করে বা দায়িত্বে থাকে, তারা যেন এই কথা ভাবে: “ যদি আমার মৃত্যুর পর আমার নিজের সন্তানরা অসহায় হতো , তবে আমি কি তাদের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা করতাম না? ”
  • ঠিক তেমনই, অন্যের এতিম সন্তানদের ব্যাপারেও সুবিচার ও দয়ার আচরণ করা উচিত ।
  • তাই যারা দায়িত্বে আছো, তারা যেন:
    • আল্লাহকে ভয় করে,
    • এবং ন্যায়সঙ্গত, সত্যভিত্তিক ও সঠিক কথা বলে। ]

Verse 04 : 9

  • And let those [executors and guardians] fear [injustice] as if they [themselves] had left weak offspring behind and feared for them. So let them fear Allah and speak words of appropriate justice.

আয়াত ০৪ : ১০

    • নিশ্চয় যারা অন্যায়ভাবে এতিমদের সম্পদ আত্মসাৎ করে,
    • তারা তো নিজেদের পেটে আগ্নি ভক্ষণ করছে,
    • আর তারা ভয়াবহ জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।

[ এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা অন্যায়ভাবে এতিমদের সম্পদ খাওয়ার ভয়াবহ শাস্তি ঘোষণা করেছেন:

  • কেউ যদি এতিমের সম্পদ জুলুম করে আত্মসাৎ করে, আল্লাহ বলেন, সে আসলে আগুন খাচ্ছে — এই আগুনই হবে জাহান্নামের আগুন।
  • এই আয়াতের ভাষা অত্যন্ত শক্তিশালী ও সতর্কতামূলক — এমন মানুষ অবশ্যই জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।
  • অর্থাৎ, এটা শুধু দুনিয়ার অন্যায় নয়, আখিরাতের শাস্তি-নির্ধারিত গুনাহ। ]

Verse 04 : 10

  • Indeed, those who devour the property of orphans unjustly are only consuming into their bellies fire. And they will be burned in a Blaze.

আয়াত ০৪ : ১১

    • আল্লাহ তোমাদের সন্তান সম্বন্ধে নির্দেশ দিচেছন :
    • এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান;
    • কিন্তু শুধু কন্যা দুইয়ের বেশী থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ,
    • আর মাত্র এক কন্য থাকলে তার জন্য অর্(মৃত ব্যক্তির) ধেক ।
    • তার (মৃত ব্যক্তির) সন্তান থাকলে তার (মৃত ব্যক্তির) পিতা-মাতা প্রত্যেকের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ;
    • সে নিঃসন্তান হলে এবং পিতা-মাতাই উত্তরাধিকারী হলে তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ;
    • আর যদি (মৃত ব্যক্তির) ভাইবোন থাকে, তবে মা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ;
    • এ সবই সে যা ওসিয়াত করে তা দেয়ার এবং ঋণ পরিশোধের পর ।
    • তোমাদের পিতা ও সন্তানদের মধ্যে উপকারে কে তোমাদের নিকটতর তা তোমরা জান না ।
    • এ বিধান আল্লাহর; নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

[ এই আয়াতে ইসলামি উত্তরাধিকার আইন নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে:

  • এক ছেলে পাবে দুই মেয়ের সমান অংশ।
  • যদি মেয়েরা দুইজন বা ততোধিক হয়, তারা সমষ্টিগতভাবে পাবে মোট সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ (২/৩)।
  • আর যদি একজন মেয়ে থাকে, সে পাবে অর্ধেক (১/২)।
  • মৃত ব্যক্তির বাবা-মার অংশ:
    • যদি সন্তান থাকে, তবে পিতা ও মাতা উভয়ে পৃথকভাবে ১/৬ (এক-ষষ্ঠাংশ) করে পাবে।
    • যদি সন্তান না থাকে এবং কেবল পিতা-মাতাই উত্তরাধিকারী হয়
      • তবে মা পাবে ১/৩,
      • এবং বাবা পাবে বাকি ২/৩।
    • আর যদি তার ভাই-বোন থাকে
      • তবে মা পাবে ১/৬,
      • বাবা পাবে বাকি সব অংশ (৫/৬), কারণ তিনিই আসল ওয়ারিশ
  • (এই হিসাব হবে) সেই ওসিয়ত পূরণের পর যা সে করে গেছে, অথবা কোনো ঋণ পরিশোধ করার পর।
  • তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান না।
  • এই ভাগ-বণ্টন আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। ]

Verse ০4 : 11

  • Allah instructs you concerning your children: for the male, what is equal to the share of two females. But if there are [only] daughters, two or more, for them is two thirds of one's estate. And if there is only one, for her is half. And for one's parents, to each one of them is a sixth of his estate if he left children. But if he had no children and the parents [alone] inherit from him, then for his mother is one third. And if he had brothers [or sisters], for his mother is a sixth, after any bequest he [may have] made or debt. Your parents or your children - you know not which of them are nearest to you in benefit. [These shares are] an obligation [imposed] by Allah. Indeed, Allah is ever Knowing and Wise.

Verse 04 : 12

  • তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক তোমাদের জন্য, যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে এবং তাদের সন্তান থাকলে তোমাদের জন্য তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ; ওসিয়ত পালন এবং ঋন পরিশোধের পর। তোমাদের সন্তান না থাকলে তাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ, আর তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ; তোমরা যা ওসিয়াত করবে তা দেয়ার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর । আর যদি কোন পুরুষ অথবা নারীর ‘ কালালাহ ' বা পিতা-মাতা ও সন্তানহীন উত্তরাধিকারী হয়, আর থাকে তার এক বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন, তবে প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। তারা এর বেশী হলে সবাই সমান অংশীদার হবে তিন ভাগের এক ভাগে; এটা যা ওসিয়াত করা হয় তা দেয়ার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর, কারো ক্ষতি না করে । এ হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।

এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন :

  • তোমাদের (স্বামীদের) জন্য রয়েছে তোমাদের স্ত্রীর রেখে যাওয়া সম্পদের অর্ধেক, যদি তাদের কোনো সন্তান না থাকে।
  • কিন্তু যদি তাদের সন্তান থাকে, তাহলে তোমরা পাবে চার ভাগের এক ভাগ (১/৪) — তবে এর আগে যে ওসিয়ত (উইল) তারা করে গেছে তা পূরণ করতে হবে এবং যদি কোনো ঋণ থেকে থাকে, তা শোধ করতে হবে।
  • আর স্ত্রীরা পাবে তাদের স্বামীর সম্পদের এক-চতুর্থাংশ (১/৪), যদি স্বামীর কোনো সন্তান না থাকে।
  • কিন্তু যদি স্বামীর সন্তান থাকে, তাহলে স্ত্রীরা পাবে আট ভাগের এক ভাগ (১/৮) — এটি হবে স্বামীর উইল ও ঋণ মেটানোর পর।
  • যদি কোনো পুরুষ বা নারী মারা যায় এবং তার বাবা-মা বা সন্তান না থাকে (এটিকে বলে কালালাহ), কিন্তু তার (বৈপিত্রেয়) ভাই বা বোন থাকে:
    • তাহলে প্রতিটি ভাই বা বোন পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬)।
    • কিন্তু যদি ভাই-বোন একাধিক হয়, তাহলে তারা সবাই মিলে পাবে এক-তৃতীয়াংশ (১/৩) — উইল ও ঋণ মেটানোর পর, কাউকে ক্ষতি না করে।
  • এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত নিয়ম। আর আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং অতি সহনশীল ।

  • And for you is half of what your wives leave if they have no child. But if they have a child, for you is one fourth of what they leave, after any bequest they [may have] made or debt. And for the wives is one fourth if you leave no child. But if you leave a child, then for them is an eighth of what you leave, after any bequest you [may have] made or debt. And if a man or woman leaves neither ascendants nor descendants but has a brother or a sister, then for each one of them is a sixth. But if they are more than two, they share a third, after any bequest which was made or debt, as long as there is no detriment [caused]. [This is] an ordinance from Allah, and Allah is Knowing and Forbearing.

In this verse, Allah says:

  • You (husbands) will receive half of what your wives leave behind if they have no children.
  • But if they do have children, then you will receive one-fourth (¼) — after fulfilling any will they made and paying any debts they owed.
  • Wives will receive one-fourth (¼) of what their husbands leave behind if the husbands have no children.
  • But if the husbands do have children, then the wives will receive one-eighth (⅛) — after fulfilling the will and paying any debts.
  • If a man or woman dies and has neither parents nor children (this is called kalālah), but has a maternal half-brother or half-sister:
    • Then each sibling will receive one-sixth (1/6).
    • But if there are more than one, they will share one-third (⅓) equally — again, after fulfilling any will or debt, and without causing harm to anyone.
  • These are fixed rules from Allah. And Allah is All-Knowing and Most Forbearing.

Verse 04 : 13 - 14

  • এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করলে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তারা সেখানে স্থায়ী হবে আর এটাই হলো মহাসাফল্য।
  • আর কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হলে এবং তার নির্ধারিত সীমা লংঘন করলে তিনি তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন; সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।

  • These are the limits [set by] Allah, and whoever obeys Allah and His Messenger will be admitted by Him to gardens [in Paradise] under which rivers flow, abiding eternally therein; and that is the great attainment.
  • And whoever disobeys Allah and His Messenger and transgresses His limits - He will put him into the Fire to abide eternally therein, and he will have a humiliating punishment.

Verse 04 : 15

  • আর তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চারজন সাক্ষী তলব করবে । যদি তারা সাক্ষ্য দেয় তবে তাদেরকে ঘরে অবরুদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তাদের মৃত্যু হয় বা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা করেন ।

এই আয়াতটি ইসলামের প্রাথমিক যুগে নারীদের অশ্লীল কাজ (বিশেষ করে ব্যভিচার) এর বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়।

  • “যারা অশ্লীল কাজ করে” — এখানে বোঝানো হচ্ছে ব্যভিচারের মতো খোলামেলা অশ্লীলতা।
  • “চারজন সাক্ষী আনো” — ব্যভিচার প্রমাণের জন্য ইসলামী শরীয়তে চারজন নির্ভরযোগ্য সাক্ষীর প্রয়োজন হয় যারা ঘটনাটি সরাসরি দেখেছে।
  • “তাদেরকে ঘরে আটকে রাখো” — যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তখন শাস্তি হিসেবে নারীকে ঘরবন্দি করা হত।
  • “যতক্ষণ না মৃত্যু আসে, অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোনো পথ নির্ধারণ করেন” — এটাই তখনকার অস্থায়ী শাস্তি ছিল। পরবর্তীতে আল্লাহ শরীয়তের চূড়ান্ত বিধান দিয়ে দেন, যেমন: নির্দিষ্ট শাস্তি (হাদ)।

শরীয়তের পূর্ণাঙ্গ বিধান: এই আয়াতটি ইসলামি আইনের একটি প্রাথমিক ধাপ। পরবর্তীতে সূরা আন-নূর (২৪:২)-এ ব্যভিচারকারীদের জন্য নির্দিষ্ট শাস্তি নির্ধারণ করা হয়:

  • “ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী—তোমরা তাদের প্রত্যেককে একশ বার করে প্রহার করো…”

  • Those who commit unlawful sexual intercourse of your women - bring against them four [witnesses] from among you. And if they testify, confine the guilty women to houses until death takes them or Allah ordains for them [another] way.

This verse was revealed during the early period of Islam and provides a temporary legal guideline regarding women who commit acts of immorality (specifically adultery or blatant indecency).

  • “Those who commit immoral acts” – This refers to open and clear acts of adultery or sexual misconduct.
  • “Bring four witnesses” – In Islamic law (Shari’ah), adultery can only be proven if four trustworthy individuals witness the act directly.
  • “Confine them to their homes” – If the accusation is proven, the woman would be confined to her home as a form of punishment.
  • “Until death takes them or Allah makes for them another way” – This was a temporary ruling until Allah revealed a more complete and final judgment.

Complete Legal Ruling in Shari’ah: This verse represents a transitional stage in Islamic legal development. Later, in Surah An-Nur (24:2), Allah revealed the definitive punishment for proven adultery:

  • “The woman and the man guilty of adultery – flog each one of them with a hundred lashes…”

This later verse replaced the earlier confinement ruling, establishing a clear legal penalty within the justice system of Islam.


Verse 04 : 16

  • আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা (এ ধরনের অশ্লীলতায়) জড়িয়ে পড়ে, তাদের উভয়কে শাস্তি দাও। তবে যদি তারা তাওবাহ করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, তাহলে তাদেরকে ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাহ কবুলকারী ও পরম দয়ালু।

এই আয়াতে বলা হয়েছে:

  • যদি দুই ব্যক্তি এমন অশ্লীল বা গুনাহের কাজে লিপ্ত হয় (যেমন: অশ্লীলতা, সমকামিতা বা অন্য কোনো অশ্লীল সম্পর্ক), তখন সমাজ ও শাসকগোষ্ঠী তাদেরকে সামাজিকভাবে শাস্তি বা ধিক্কার দিতে পারে।
  • কিন্তু যদি তারা আল্লাহর কাছে তাওবাহ করে (অর্থাৎ গুনাহ স্বীকার করে, মন থেকে অনুতপ্ত হয় এবং ভবিষ্যতে আর না করার প্রতিজ্ঞা করে), এবং নিজেদের আচরণ ভালো করে ফেলে, তখন তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে হবে। তাদের প্রতি বিদ্বেষ বা শাস্তির মনোভাব রাখা যাবে না।
  • এই আয়াতের মাধ্যমে ইসলামে অনুতাপ ও সংশোধনের পথ খোলা রাখা হয়েছে, যেন কেউ ভুল করলেও তার ফিরে আসার সুযোগ থাকে।

  • And the two among you who commit it (indecency), punish them both. But if they repent and reform, then leave them alone. Surely, Allah is Most Accepting of Repentance, Most Merciful.

This verse addresses cases where two individuals from the community are involved in indecent or immoral behavior (such as sexual misconduct).

  • "Punish them both" – This refers to applying a social or disciplinary correction to deter such behavior. It could include reprimanding, isolation, or public disapproval—within the bounds of justice and without violence.
  • "If they repent and reform" – If these individuals sincerely repent, meaning they admit their mistake, feel remorse, and commit not to repeat it, and they show signs of real improvement, then no further action should be taken against them.
  • "Then leave them alone" – This teaches the community not to humiliate or hold grudges against people who have changed. Once someone truly repents and changes, society should forgive them, just as Allah does.
  • "Indeed, Allah is Most Accepting of Repentance, Most Merciful" – This reminds us that Allah's mercy is vast, and He always accepts sincere repentance. Therefore, believers should also be forgiving.

Verse 04 : 17

  • আল্লাহ অবশ্যই তাদের তাওবা কবুল করেন, যারা অজ্ঞতার কারণে মন্দ কাজ করে ফেলে, তারপর শিগগিরই তাওবা করে নেয়। এরাই হচ্ছে তারা, যাদের তাওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

এই আয়াতে বলা হয়েছে:

  • "অজ্ঞতার কারণে মন্দ কাজ" - অর্থাৎ যারা অজান্তে, না জেনে, প্রবৃত্তির তাড়নায় বা মুহূর্তের ভুলে কোনো গুনাহ করে ফেলে। এখানে “অজ্ঞতা” শুধু না-জানা বোঝায় না, বরং ইচ্ছাকৃত অবাধ্যতা নয়—এরকম ভুল বোঝানো হয়।
  • "তারপর শিগগিরই তাওবা করে নেয়" - তারা দেরি না করে তাদের ভুল বুঝে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে, গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়, ক্ষমা চায় এবং ভবিষ্যতে তা আর না করার প্রতিজ্ঞা করে।
  • "আল্লাহ তাদের তাওবা গ্রহণ করেন" - আল্লাহ এমন লোকদের তাওবা গ্রহণ করেন কারণ তারা সত্যিকারভাবে অনুতপ্ত ও নির্ভর করে আল্লাহর দয়ার ওপর।
  • "আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়" - আল্লাহ জানেন কে সত্যিকার তাওবা করছে, আর কে শুধু মুখে বলছে। তিনি জানেন কার হৃদয় সত্যি পরিবর্তিত হয়েছে এবং কাকে ক্ষমা করা উচিত।

  • Allah accepts the repentance of those who do evil in ignorance and repent soon after. It is they to whom Allah will turn in forgiveness. And Allah is All-Knowing, All-Wise.”
  • “Those who do evil in ignorance” - This refers to people who commit sins not out of arrogance or stubborn rebellion, but because of lack of awareness, emotional weakness, or being overcome by desire. It doesn’t only mean intellectual ignorance—it includes moral or spiritual weakness too.
  • “And repent soon after” - These people do not delay their repentance. Once they realize their mistake, they feel regret, seek Allah’s forgiveness, and make a sincere intention to change.
  • “It is they to whom Allah will turn in forgiveness” - Allah is always ready to accept the repentance of sincere people, especially those who rush back to Him without making excuses or repeating the sin carelessly.
  • “Allah is All-Knowing, All-Wise” - Allah knows what’s truly in people’s hearts. He knows who is genuinely remorseful and who is pretending. His wisdom ensures that mercy is balanced with justice.

Verse 04 : 18

  • আর তাওবাহ তাদের জন্য নয়, যারা গুনাহ করতে থাকে যতক্ষণ না তাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন সে বলে, ‘এখন আমি তাওবাহ করছি।’ এবং তাদের জন্যও নয়, যারা মারা যায় কাফির (অবিশ্বাসী) অবস্থায়। এরাই তারা, যাদের জন্য আমি প্রস্তুত করেছি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন:

  • যারা গুনাহ করতে থাকে…” : এমন মানুষদের কথা বলা হচ্ছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে সারাজীবন গুনাহ করে, ভাবছে শেষ বয়সে তাওবাহ করলেই হবে। তারা তাওবাহকে বিলম্বিত করে, এবং মৃত্যুর সময় এসে গেলে বলে, “এখন আমি তাওবাহ করছি”। এ রকম তাওবাহ আল্লাহ কবুল করেন না, কারণ তা সত্যিকারের অনুতাপ নয়, বরং মৃত্যুভয়ের কারণে মুখে বলা।
  • যারা মারা যায় কাফির অবস্থায়…” : যারা আল্লাহর অস্তিত্ব ও সত্য দ্বীনের প্রতি অবিশ্বাসী ছিল এবং সারাজীবন তাওবাহ না করে মৃত্যুবরণ করে, তাদের তাওবাহ মৃত্যুর পর আর গৃহীত হবে না।
  • “তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি” : এরা হচ্ছে এমন লোক যারা জেনে-বুঝে সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে বা তাওবাহ করতে চায়নি, তাদের জন্য পরকালে রয়েছে কঠোর শাস্তি।

  • But repentance is not accepted from those who continue to do evil deeds until death approaches one of them, and then he says, ‘Now I repent’; nor of those who die while they are disbelievers. For them We have prepared a painful punishment.

  • “Repentance is not accepted from those who do evil until death approaches…” : This refers to people who keep doing sins deliberately, thinking they’ll repent later—maybe just before they die. But if a person waits until the very moment of death, when they see the angel of death or feel death coming, that repentance is no longer sincere. It's too late.

  • “Nor from those who die while they are disbelievers…” : This means those who never believed in Allah or rejected faith, and died in that state, will not have their repentance accepted after death.

  • “For them is a painful punishment” : Those who knowingly disobey, delay repentance, or die in disbelief will face serious consequences in the Hereafter.


Verse 04 : 19

  • হে ঈমানদারগণ! যবরদস্তি করে নারীদের উত্তরাধিকার হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখো না, যদি না তারা স্পষ্ট খারাপ আচরণ করে। আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে; তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ ।

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন:

  • "যবরদস্তি করে নারীদের উত্তরাধিকার হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়"

    • ইসলাম-পূর্ব জাহেলি সমাজে নারীদের মানুষ মনে করা হতো না। স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর ওপর অধিকার দাবি করত শ্বশুরবাড়ির পুরুষরা, এমনকি তারা চাইলে তাকে বিয়ে করত বা অন্য কাউকে দিয়ে দিত।
    • ইসলাম এসে স্পষ্টভাবে এ প্রথা নিষিদ্ধ করেছে। একজন নারীর সম্মতি ছাড়া তার উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হারাম।
  • "তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখো না"

    • কেউ যদি স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় না, তবে সে যেন কৌশলে বা জোর করে স্ত্রীকে আটকে না রাখে, যাতে সে মোহর বা উপহার ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
    • এটা ছিল এক ধরনের মানসিক নির্যাতন — ইসলাম এটাকে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করেছে।
  • "যদি না তারা স্পষ্ট খারাপ আচরণ করে"

    • কোনো নারী যদি প্রকৃত ও প্রকাশ্য অসৎ কাজ বা ব্যভিচার করে, তখন বিচ্ছেদ বা কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
    • তবে এটা হতে হবে প্রমাণসহ— মিথ্যা অভিযোগ বা সন্দেহ নয়।
  • "তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবনযাপন করবে"

    • স্ত্রীদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ, সহানুভূতিশীল ও সদাচারপূর্ণ ব্যবহার করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
    • স্বামী যেন স্ত্রীকে বন্ধু, সাথী ও দায়িত্বে অংশীদার মনে করে— এটা ইসলামের পারিবারিক জীবনের ভিত্তি।
  • "তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর তবে..."

    • অনেক সময় স্বামী হয়তো স্ত্রীর কিছু বিষয়ে বিরক্ত হতে পারে বা তাকে অপছন্দ করতে পারে।
    • কিন্তু আল্লাহ বলেন, হয়তো তোমার অপছন্দের মাঝেও অনেক কল্যাণ আছে, যা তুমি এখন বুঝতে পারছ না, কিন্তু আল্লাহ জানেন।

  • O you who have believed, it is not lawful for you to inherit women by compulsion. And do not imprison them in order to take back anything you have given them, unless they commit a clear immorality. And live with them in kindness. For if you dislike them—perhaps you dislike something and Allah has placed much good in it."

  • "It is not lawful for you to inherit women by compulsion"

    • In pre-Islamic (Jahiliyyah) society, women were treated like property. When a man died, his widow could be taken by male relatives—married off or inherited against her will.
    • Islam abolished this unjust practice. A woman cannot be forced into marriage or any relationship without her consent. Coercion is forbidden (haram).
  • "Do not imprison them to take back anything you gave them"

    • A man who wants to end the relationship shouldn't trap his wife emotionally or physically just to pressure her into returning the mahr (dowry) or gifts.
    • This is considered a form of emotional abuse, and Islam strictly forbids it.
  • "Unless they commit a clear immorality"

    • If a woman commits a clear and proven immoral act (such as adultery), then certain disciplinary or legal measures may be taken.
    • However, such actions must be proven, not based on suspicion or false accusations.
  • "Live with them in kindness"

    • Husbands are instructed to treat their wives with respect, empathy, and decency.
    • Marriage is not just a legal bond, but a partnership based on mercy, love, and responsibility.
  • "If you dislike them..."

    • Sometimes, a husband may feel irritated or unhappy with certain aspects of his wife.
    • But Allah reminds us: perhaps what you dislike holds great good, which you cannot yet see—but Allah knows best.

Verse 04 : 20

  • আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করতে চাও, যদিও তোমরা তাদের কাউকে অনেক সম্পদ দিয়েছ, তবুও তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না। তোমরা কি মিথ্যা অভিযোগ ও প্রকাশ্য পাপের মাধ্যমে তা গ্রহণ করতে চাও?”
  • ইসলাম প্রয়োজন হলে বিবাহ বিচ্ছেদ এবং নতুন বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। কেউ যদি বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে না চান এবং অন্য কাউকে বিয়ে করতে চান, তবে তা বৈধ—কিন্তু এই সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত সুবিচার, সততা এবং দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে ।
  • যদি কোনো পুরুষ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে চান, তবু তিনি আগের স্ত্রীকে দেওয়া মোহর বা উপহার ফেরত চাইতে পারেন না —তা যত বড়ই হোক । এমন আচরণ অনুচিত, সম্মানহানিকর এবং ইসলামের ন্যায্যতা ও নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
  • আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেন — যদি কেউ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে স্ত্রীর কাছ থেকে মোহর বা উপহার ফেরত নেয়ার চেষ্টা করে, সেটা বড় অন্যায় এবং প্রকাশ্য পাপ । ইসলাম এমন ধোঁকাবাজি, চক্রান্ত এবং অসততা কখনোই বরদাশত করে না।

  • And if you intend to replace one wife with another, and you have given one of them a great amount [in gift], do not take [back] from it anything. Would you take it back by slander and a manifest sin?

  • Islam permits divorce and remarriage when necessary, but such decisions must be based on justice, honesty, and a sense of responsibility. If a man decides to separate from his wife and marry someone else, he is allowed to do so—but he must act fairly and with dignity.
  • If he had given his first wife any dowry or gifts, he has no right to reclaim any of it, regardless of how large the amount was. Trying to take back those gifts is improper, dishonorable, and against the ethical principles of Islam.
  • Allah clearly condemns the act of reclaiming a gift through false accusations or manipulation. Such behavior is considered a serious wrongdoing and an open sin. Islam strongly forbids deceit, injustice, and using slander as a means to deprive someone of their rights.

Verse 04 : 21

  • আর কীভাবে তোমরা তা (মোহর/উপহার) ফিরিয়ে নিতে চাও, যখন তোমরা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়েছ এবং তারা তোমার কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে ?
  • একত্র হওয়া” বলতে বোঝানো হয়েছে দাম্পত্য সম্পর্ক
  • দৃঢ় অঙ্গীকার” বলতে বোঝানো হয়েছে নিকাহ (বিবাহ)
  • আল্লাহ প্রশ্ন তুলছেন: যখন তোমরা একজন নারীকে সম্মান দিয়ে বিবাহ করেছো, তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ জীবন কাটিয়েছো, তখন কীভাবে তোমরা তার থেকে মোহর বা উপহার ফেরত চাইতে পারো ? এটা স্পষ্টতই অনৈতিক, অমানবিক এবং দাম্পত্য সম্পর্কের পবিত্রতাকে অপমান করার মতো কাজ ।

  • And how could you take it (the dowry or gift) back, when you have been intimate with one another and they have taken from you a solemn covenant?
  • “Been intimate with one another” refers to the marital relationship — a bond that includes emotional and physical closeness between husband and wife.
  • “Solemn covenant” refers to Nikah (marriage) — a sacred contract where the wife, with dignity and trust, agrees to share her life under the responsibility of her husband.
  • Allah is asking a powerful question: How can you even think of taking back the dowry or gifts you gave her, after forming such a deep and honorable bond through marriage ? Doing so is clearly unethical, unjust, and an insult to the sanctity of the marital relationship.

Verse 04 : 22

  • তোমরা সেই নারীদের বিয়ে করো না, যাদেরকে তোমাদের পিতা বা পূর্বপুরুষরা বিয়ে করেছে। তবে পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটি ছিল এক অশ্লীল কাজ, মারাত্মক ঘৃণ্য ও খুবই নিচু পথ।”

জাহেলিয়াত যুগে (ইসলাম-পূর্ব অন্ধকার যুগে) নৈতিকতার মারাত্মক অবক্ষয় ছিল। একজন পিতা মারা গেলে তার স্ত্রীকে তার ছেলেরাই “উত্তরাধিকার” হিসেবে বিবেচনা করত এবং কোনো সংকোচ ছাড়াই বিয়ে করে নিত । ইসলাম এ প্রথা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে দেয়।

সহীহ হাদীস :

  • “ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন, ইসলাম আসার আগে কেউ মারা গেলে তার ছেলে বাবার স্ত্রীর অধিকার গ্রহণ করত এবং চাইলে তাকে বিয়ে করত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস: ৪৫৭৯]

  • Do not marry those women whom your fathers had married, except what has already occurred. Indeed, it was a shameful act, a hateful deed, and an evil path.
  • During the Jahiliyyah period (the pre-Islamic era of ignorance), moral values were severely corrupted. When a father passed away, his wife was sometimes considered part of the inheritance, and the son would marry her without any sense of shame or guilt. This practice was socially accepted at the time, even though it was morally outrageous.

Authentic Hadith Reference :

  • As reported in Sahih al-Bukhari, Ibn Abbas (RA) said: “In the pre-Islamic period, if a man died, his son would inherit his wife (stepmother), and if he wanted, he could marry her.” [Sahih al-Bukhari, Hadith 4579]

Verse 04 : 23

  • তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, মেয়ে, বোন, ফুফু খালা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, দুধমা, দুধবোন, শাশুড়ী ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সংগত হয়েছ তার আগের স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত মেয়ে, যারা তোমাদের অভিভাবকত্ব আছে, তবে যদি তাদের সাথে সঙ্গত না হয়ে থাক, তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই। আর তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তোমাদের ঔরসজাত ছেলের স্ত্রী ও দুই বোনকে একত্র করা, আগে যা হয়েছে, হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

এই আয়াতটি ইসলামে যাদের সঙ্গে বিয়ে করা চিরতরে হারাম (নিষিদ্ধ) — এমন নারীদের একটি তালিকা তুলে ধরেছে :

  • তোমাদের মা – যিনি তোমাকে জন্ম দিয়েছেন।
  • তোমাদের মেয়ে – তোমার নিজের সন্তান।
  • তোমাদের বোন – তোমার মা-বাবার মেয়ে।
  • তোমার ফুফু – তোমার বাবার বোন।
  • তোমার খালা – তোমার মায়ের বোন।
  • তোমার ভাইয়ের মেয়ে – তোমার ভাতিজি।
  • তোমার বোনের মেয়ে – তোমার ভাগ্নি।
  • তোমার দুধ মা – যিনি তোমাকে ছোটবেলায় দুধ পান করিয়েছেন (যদি পাঁচবার বা তার বেশি)।
  • তোমার দুধ বোন – যে মেয়েটিও সেই দুধ মা’র দুধ পান করেছে।
  • তোমার শাশুড়ি – স্ত্রীর মা।
  • স্ত্রীর আগের স্বামী থেকে জন্ম নেওয়া মেয়ে, যদি সেই স্ত্রী তোমার অধীনে থেকে তোমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক (সহবাস) করে থাকেন।
    • তবে যদি সহবাস না হয়ে থাকে, তখন তার মেয়ে তোমার জন্য নিষিদ্ধ নয়।
  • তোমার ঔরসজাত ছেলের স্ত্রী – তোমার নিজের ছেলের স্ত্রী (বউ)।
  • দুই বোনকে একসঙ্গে বিবাহ – একই সময়ে দুই বোনকে স্ত্রী করা হারাম।

"আগে যা হয়েছে, হয়েছে" — অর্থাৎ ইসলাম আসার আগে যদি কেউ অজ্ঞতা বা সংস্কারের কারণে এমন কিছু করে থাকে, আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিয়েছেন।


  • Prohibited to you [for marriage] are your mothers, your daughters, your sisters, your paternal aunts, your maternal aunts, your brother’s daughters, your sister’s daughters, your milk-mothers (those who breastfed you), your milk-sisters, your wives’ mothers, and your stepdaughters under your guardianship (born of wives with whom you have consummated marriage) — but if you have not consummated the marriage, then there is no sin upon you. Also prohibited are the wives of your biological sons and [to marry] two sisters simultaneously — except for what has already occurred. Indeed, Allah is Ever-Forgiving, Most Merciful.

This verse outlines the women whom a Muslim man is permanently forbidden to marry:

  • Your mothers – the woman who gave birth to you.
  • Your daughters – your own children.
  • Your sisters – born from your same parents or one of them.
  • Your paternal aunts – your father’s sisters.
  • Your maternal aunts – your mother’s sisters.
  • Your nieces through your brother – daughters of your brothers.
  • Your nieces through your sister – daughters of your sisters.
  • Your milk-mothers – women who breastfed you as a child (five or more feedings under Islamic rule).
  • Your milk-sisters – girls who were also breastfed by your milk-mother.
  • Your mother-in-law – your wife’s mother.
  • Your stepdaughter – if she is under your care and your marriage with her mother has been consummated.
    • Note: If you haven’t had intimate relations with her mother, marrying the stepdaughter is not forbidden.
  • Your son’s wife – the wife of your biological son.
  • Two sisters at the same time – marrying both sisters together is forbidden.

The verse ends with: "What happened in the past is forgiven" — meaning if these acts were committed before Islam or out of ignorance, Allah has forgiven them.


Verse 04 : 24

  • আর নারীদের মধ্যে শুধুমাত্র তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া সব বিবাহিত নারী তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ। এটাই আল্লাহর নির্ধারিত বিধান তোমাদের জন্য । এই নিষিদ্ধদের বাইরে যেসব নারীর সঙ্গে তোমরা বিবাহ করতে চাও, তাদেরকে সম্মানের সঙ্গে বিবাহ করো — তোমাদের সম্পদের বিনিময়ে, অবৈধ সম্পর্কের উদ্দেশ্যে নয় । আর যাদের সঙ্গে তোমরা দাম্পত্যসুখ লাভ করো, তাদের মাহর (বিয়েতে নির্ধারিত উপহার) অবশ্যই দেবে, যা তাদের প্রাপ্য। মাহর নির্ধারণের পর যদি তোমরা পরস্পরের সম্মতিতে তা পরিবর্তন করো, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং তিনি প্রজ্ঞাময়।
  • ইসলামে বিবাহিত নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ । - তবে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ইসলাম-পূর্ব সমাজে যেসব নারী দাসী হতো, সেক্ষেত্রে ইসলামিক বিধান অনুসারে কিছু ব্যতিক্রম ছিল (তৎকালীন প্রেক্ষাপটে)।

  • এই নিষিদ্ধ নারীদের বাইরে যেসব নারী বৈধ, তাদের সঙ্গে বৈধভাবে (নিকাহ্) বিয়ে করা যাবে - কিন্তু সেটা হতে হবে সম্পদের বিনিময়ে, সম্মানের সঙ্গে, একে অপরকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করার জন্য—শুধু যৌন ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে নয়।

  • বিয়ের পর, যেসব নারীর সঙ্গে তোমরা দাম্পত্য সম্পর্ক গড়ে তুলবে, তাদের মাহর বা উপহার দিতে হবে - এটা তাদের প্রাপ্য এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

  • মাহর নির্ধারিত হওয়ার পর, যদি স্বামী-স্ত্রী নিজেদের মধ্যে রাযী হয়ে তা কমিয়ে নেয় বা বাড়ায়—তাতেও কোনো দোষ নেই।

  • আল্লাহ জানেন কে কী করছে, এবং তিনি প্রজ্ঞাময়। - তিনি এমন কোনো বিধান দেন না যাতে মানুষের জন্য কষ্ট হয়—সবই ন্যায়বিচারের এবং কল্যাণের জন্য।


  • And among women, all married ones are forbidden to you—except those whom your right hands possess. This is Allah’s decree upon you. Beyond these, all others are lawful for you to marry—provided you seek them with your wealth, desiring chastity, not unlawful sexual relations. So for those you have enjoyed (in marriage), give them their due dowry as an obligation. But there is no sin upon you for whatever you mutually agree upon after the obligation. Indeed, Allah is All-Knowing, All-Wise

This verse sets further boundaries and rules for lawful marriage in Islam:

  • Married women are completely forbidden for you to marry or have a relationship with in Islam.
    • Exception: Women who were taken as captives or slaves in a lawful way during war (as was common in pre-Islamic societies) were allowed under specific Islamic regulations and ethical conduct. This was a temporary social condition, not an encouragement.
  • Other women (those not listed as forbidden) are lawful for marriage — but only through a respectful, formal marriage where you spend from your wealth (mahr/dowry), not just for lust or illicit relations.
  • After marriage, if you enter into a physical relationship (consummation), you must give them their mahr — it is a rightfully due gift and a binding duty in Islam.
  • If after the dowry is fixed, both of you agree to change or reduce it, there’s no sin — it’s allowed by mutual consent.
  • Allah knows everything and is Most Wise - meaning these commands are based on divine knowledge and perfect wisdom for human well-being.

Verse 04 : 25

  • আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি স্বাধীন ঈমানদার নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য না রাখে, তবে সে তোমাদের অধিকারভুক্ত ঈমানদার দাসীদের মধ্য থেকে বিয়ে করুক। আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন—তোমরা একে অপরেরই অংশ। সুতরাং, তাদের (দাসীদের) অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে বিয়ে করো এবং প্রাপ্য মাহর (বিয়ের দেনমোহর) দাও—যাতে তারা পবিত্র জীবন যাপন করে, ব্যভিচারিণী না হয় এবং গোপনে উপপতি গ্রহণ না করে। আর যদি তারা বিবাহিত হওয়ার পর কোনো অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়, তবে তাদের জন্য শাস্তি হবে স্বাধীন নারীদের শাস্তির অর্ধেক। এটি তাদের জন্য, যারা তোমাদের মধ্যে ব্যভিচারের ভয় করে। আর যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, তাহলে সেটাই তোমাদের জন্য উত্তম। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
  • যদি কেউ গরিব হয় এবং স্বাধীন মুসলিম নারীকে বিয়ে করার মতো সামর্থ্য না থাকে, তবে সে নিজের অধিকারভুক্ত দাসী (যিনি একজন মুসলিমা) কে বিয়ে করতে পারে।
  • আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন কার বিশ্বাস কতটা দৃঢ় — স্বাধীন বা দাস, তা দিয়ে বিচার হয় না।
  • তবে, এই বিয়ের জন্য তার অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে এবং উপযুক্ত মোহর (বিয়ের উপহার) দিতে হবে, যেন সে সম্মানজনক জীবন পায়।
  • যদি এই দাসী বিবাহের পর কোনো অশ্লীল কাজে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তার শাস্তি হবে স্বাধীন নারীদের শাস্তির অর্ধেক—কারণ তার অবস্থান ও শিক্ষা-সংস্কার স্বাধীন নারীদের চেয়ে ভিন্ন।
  • এই নিয়ম তাদের জন্য, যারা নিজের ঈমান ও নফস (মন ও শরীর) নিয়ে চিন্তিত, যারা অন্যভাবে নিজেদের পবিত্র রাখতে পারছে না । কিন্তু যদি কেউ ধৈর্য ধরতে পারো, অপেক্ষা করে, তাহলে সেটা আল্লাহর দৃষ্টিতে আরও উত্তম।
  • আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু — তিনি তোমাদের অবস্থাও জানেন, অন্তরও জানেন।

  • And whoever among you cannot afford to marry a free believing woman, then he may marry one of your believing bondwomen. And Allah knows best about your faith. You are from one another. So marry them with the permission of their guardians and give them their due dowry, in a good manner, so that they live a chaste life—not committing fornication or taking lovers in secret. And if they commit indecency after marriage, then their punishment is half that of free women. This (permission) is for those among you who fear falling into sin. But if you are patient, it is better for you. And Allah is Forgiving and Merciful.
  • If a man cannot afford to marry a free Muslim woman, Islam allows him to marry a Muslim slave woman (from among those under his ownership), as long as she is also a believer.
  • Allah is fully aware of everyone's level of faith—slave or free, all are part of the same human family in Islam.
  • However, such a marriage must be done:
    • With the guardian’s permission (like the owner or caretaker),
    • And the woman must be given a proper dowry (mahr), just like any other wife.
  • The goal is to let her live a respectable and chaste life, not just be taken for lust or secret affairs.
  • If such a woman commits an immoral act (like adultery) after marriage, her punishment will be half that of a free woman, because her social conditions were different.
  • This rule is mainly for those who fear that they may fall into sin (like zina or illicit relationships) if they don’t marry.
  • But if you can stay patient, control your desires, and wait—that is better for you.
  • Allah is always Forgiving and Merciful—He understands your condition and gives you guidance out of mercy.

Verse 04 : 26

  • আল্লাহ (তাঁর বিধান) তোমাদের নিকট বিশদভাবে বিবৃত করতে, তোমাদেরকে তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শে পরিচালনা করতে এবং তোমাদের তওবা কবুল করতে চান। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

আল্লাহ এইসব নিয়ম-কানুন (যেমন: কার সঙ্গে বিয়ে বৈধ, কার সঙ্গে নয়) তোমাদের ভালো বুঝানোর জন্য বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করছেন।

  • তিনি চান, তোমরা যেন আগের সৎ লোকদের পথ অনুসরণ করো, যেমন নবী, সাহাবা ও নেককারদের।
  • তিনি চান তোমরা যদি ভুল করেও থাকো, তাহলে যেন তওবা করে ফিরে আসো, আর তিনি তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
  • আল্লাহ সব কিছু জানেন — কার অন্তরে কী আছে, কে কী করছে — এবং তিনি অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়; তাঁর সব নির্দেশই জ্ঞান ও করুণার ভিত্তিতে নির্ধারিত।

  • Allah intends to make things clear to you, and to guide you to the ways of those before you, and to turn to you in mercy. And Allah is All-Knowing, All-Wise.

Allah is clearly explaining these rules to you—like who you can marry and who you cannot—so that you can understand them well.

  • He wants you to follow the path of the righteous people before you, like the Prophets, the companions, and those who were truly good.
  • Even if you have made mistakes, Allah wants you to repent and return to Him—and He is always ready to accept your repentance.
  • Allah knows everything—what is in your heart and what you do—and He is Wise; all of His commands are based on knowledge, mercy, and what is best for you.

Verse 04 : 27

  • আর আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করতে চান। আর যারা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারা চায় যে, তোমরা ভীষণভাবে পথচ্যুত হও।
  • আল্লাহর উদ্দেশ্য হলো তোমাদের গুনাহ মাফ করা, তোমাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা এবং তোমাদের জন্য কল্যাণ করা। কিন্তু যারা খারাপ চাহিদা বা কামনা-বাসনার অনুসরণ করে, তারা চায় তোমরাও যেন সৎ পথ থেকে সরে গিয়ে বড় ধরনের বিপথগামিতায় পড়ে যাও।

  • এটা একধরনের সতর্কবার্তা—আল্লাহর রহমত পেতে হলে তাঁর দেওয়া নিয়ম মানা জরুরি। আর যারা নিজেদের খেয়াল-খুশি ও খারাপ প্রবৃত্তির দাস, তাদের পথে না গিয়ে, সঠিক পথেই থাকার চেষ্টা করতে হবে।


  • And Allah wishes to forgive you; but those who follow their desires wish that you would deviate greatly.
  • Allah’s intention is to forgive your sins, guide you back to the right path, and bring goodness into your lives. But those who follow evil desires and lustful urges want you to deviate far from the straight path and fall into serious misguidance.

  • This verse serves as a warning—if you want Allah’s mercy, you must follow the path He has prescribed. Don’t follow those who are slaves to their whims and corrupt desires. Instead, try to remain firm on the righteous path.


আয়াত ০৪ : ২৮

    • আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান ;
    • আর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বলরূপে ।

[ এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা জানাচ্ছেন যে,

  • তিনি মানুষকে দ্বীনের ব্যাপারে কষ্টে ফেলতে চান না। ইসলামি বিধান ও হুকুমগুলো মানুষের সামর্থ্য ও স্বভাব অনুযায়ী সহজ ও ভারসাম্যপূর্ণভাবে নির্ধারিত হয়েছে। যেমন: রোজা, নামাজ, ওসিয়ত, উত্তরাধিকার ইত্যাদি সব বিধানেই সহজতা ও ভারসাম্য রয়েছে।

  • মানুষের ভেতরে চাহিদা, আবেগ, ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন: গুনাহে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা, ধৈর্যের অভাব, অল্পে হতাশ হওয়া ইত্যাদি। আল্লাহ এসব বিবেচনায় নিয়ে অনেক বিষয়ে সহজতা দিয়েছেন—যেমন:

    • গুনাহ করলে তাওবার সুযোগ দেওয়া,
    • একাধিক স্ত্রীর অনুমতির ক্ষেত্রে ন্যায়ের শর্ত রাখা,
    • ওসিয়ত ও উত্তরাধিকার নিয়ে পরিষ্কার বিধান দেওয়া।
    • প্রয়োজন অনুযায়ী বিধানে ছাড় (রুখসাত) প্রদান করা, যেমন:
      • রোযার ক্ষেত্রে:
        • রমজানে রোযা রাখা ফরজ।
        • কিন্তু যদি কেউ অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তাহলে রোযা ভাঙা বা পরবর্তীতে রাখা—এটা রুখসাত।
      • নামাজের ক্ষেত্রে:
        • ফরজ নামাজ চার রাকাত, কিন্তু সফরে থাকলে দুই রাকাত পড়া যায়—এটা রুখসাত।
      • হারাম খাদ্যের বিষয়ে:
        • সাধারণভাবে হারাম খাদ্য খাওয়া নিষেধ।
        • কিন্তু প্রাণ রক্ষার প্রয়োজন হলে, সাময়িকভাবে হারাম কিছু খাওয়ার অনুমতি—এটাও রুখসাত। ]
  • আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না (সূরা আল-বাকারা ২:২৮৬)। এই আয়াত (৪:২৮) সেই নীতিরই একটি দৃষ্টান্ত।


আয়াত ০৪ : ২৯

  • হে ঈমানদারগণ!
    • তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না, তবে যদি তা পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসায় হয়, তবে তা বৈধ।
    • আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না।
    • নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু ।

[ এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে অন্যায় উপায়ে সম্পদ অর্জন ও আত্মঘাতী কাজ থেকে সতর্ক করছেন।

  • অন্যায়ভাবে সম্পদ গ্রহণ নিষেধ:
    • প্রতারণা, সুদ, ঘুষ, চুরি বা জোরপূর্বক অন্যের সম্পদ নেওয়া হারাম।
    • যেটা বৈধ—তা হলো দুজনের সম্মতিতে সম্পদ আদান-প্রদান বা বাণিজ্য।
  • নিজেকে হত্যা নিষিদ্ধ:
    • আত্মহত্যা করা বা এমন কাজ করা যা নিজের জীবন বিপন্ন করে ফেলে — ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ।
    • এর মধ্যে হতাশা, নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন বা বিপজ্জনক কাজে জড়িয়ে পড়াও অন্তর্ভুক্ত।
  • আল্লাহর দয়া:
    • এই বিধানগুলো আল্লাহ মানুষের কল্যাণেই নির্ধারণ করেছেন। ]

আয়াত ০৪ : ৩০

    • আর কেউ যদি সীমালঙ্ঘন ও জুলুম করে ,
    • তবে আমি অবশ্যই তাকে আগুনে নিক্ষেপ করব;
    • এটা আল্লাহর জন্য একেবারে সহজ।

[ এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞাগুলোর (অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করা, আত্মহত্যা করা) ব্যাপারে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন—

  • যারা জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্মসাৎ করে বা নিজেদের জীবন ধ্বংস করে, তারা শুধু গুনাহগারই নয়, বরং তারা সীমালঙ্ঘনকারী ও অত্যাচারী।
  • এমন লোকদের আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাবেন। এটা কোনো কল্পনা নয়, বরং নিশ্চিত পরিণতি।
  • আল্লাহর কাছে কাউকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো কঠিন কিছু নয়। তিনি সর্বশক্তিমান, ন্যায়বিচারক। ]

আয়াত ০৪ : ৩১

  • [ হে ঈমানদারগণ! ]
    • তোমাদেরকে যেসব গোনাহ থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে,
    • তোমরা যদি সেসব বড় পাপ থেকে বিরত থাকো,
    • তাহলে আমি তোমাদের ছোটখাটো (লঘু) গোনাহগুলো মাফ করে দেব
    • এবং তোমাদেরকে সম্মান ও মর্যাদার একটি প্রবেশস্থলে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবো।

[ এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে একটি আশ্বাস দিচ্ছেন:

  • যদি আমরা বড় গুনাহগুলো (যেমন: শিরক, হত্যা, সুদ, যিনা, চুরি, মিথ্যা অপবাদ, ইত্যাদি) থেকে বেঁচে থাকি,
  • তাহলে ছোটখাটো ভুলগুলো (যেগুলো কখনও কখনও অজান্তে হয়) তিনি ক্ষমা করে দেবেন।
  • আর এর পুরস্কার হিসেবে আমাদেরকে জান্নাতের সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করাবেন। ]

আয়াত ০৪ : ৩২

  • [ হে ঈমানদারগণ! ]
    • তোমরা এমন জিনিস কামনা করো না, যা দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে কারও উপর অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
    • পুরুষরা যা উপার্জন করে, তার একটি নির্ধারিত অংশ তাদের জন্য রয়েছে;
    • আর নারীরাও যা উপার্জন করে, তার একটি নির্ধারিত অংশ তাদের জন্য রয়েছে।
    • তোমরা আল্লাহর নিকট তাঁর অনুগ্রহ চাও।
    • নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।

[ এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট :
উম্মে সালামা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ- বলেন : "হে আল্লাহর রাসূল! পুরুষরা তো জিহাদে অংশ নেয়, শাহাদাত লাভ করে, আর আমরা নারীরা এ থেকে বঞ্চিত। এমনকি মীরাসেও পুরুষরা আমাদের দ্বিগুণ পায়।"

মীরাস বলতে বোঝায়:
কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি শরীয়ত অনুযায়ী উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করার বিধান।

এই প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন, যাতে স্পষ্ট করা হয়:
➤ নারী-পুরুষের মধ্যে কিছু পার্থক্য আল্লাহর হিকমতের অংশ,
➤ কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদান ও মর্যাদায় কেউ বঞ্চিত নয়।
📚 (তথ্যসূত্র: মুসনাদে আহমাদ ৬/৩২২)

এই আয়াত আমাদের শেখায়:

  • অন্যের প্রতি ঈর্ষা বা হিংসা করা উচিত নয়। কেউ যদি বেশি ধনী, শক্তিশালী, জ্ঞানী বা প্রভাবশালী হয়, তাহলে তার প্রতি হিংসা না করে আল্লাহর কাছে নিজের জন্য ভালো কিছু চাইতে হবে।
  • আল্লাহ প্রত্যেককে তাঁর জ্ঞান ও কৌশল অনুযায়ী আলাদা দায়িত্ব ও অবস্থা দিয়েছেন। পুরুষদের উপার্জন ও কর্তব্য ভিন্ন, নারীদের উপার্জন ও দায়িত্ব ভিন্ন। তবে উভয়ের পুরস্কার নির্ভর করে তাদের কর্মের উপর।
  • কোনো কিছু চাইলে মানুষের কাছ থেকে নয়, বরং আল্লাহর কাছ থেকে চাওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। তিনিই সব অনুগ্রহের উৎস। ]

আয়াত ০৪ : ৩৩

  • পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তির প্রত্যেকটির জন্য আমি উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করেছি;
  • আর যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকার (বা প্রতিশ্রুতি, চুক্তি) বদ্ধ হয়েছ, তাদেরকে তাদের প্রাপ্য অংশ দাও।
  • নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বকিছুর উপর পর্যবেক্ষণকারী।

[ এই আয়াত ইসলামে উত্তরাধিকার বণ্টনের ন্যায়সঙ্গত ও দায়িত্বশীল ব্যবস্থার অংশ।:

  • আল্লাহ প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর (ওয়ারিশের) জন্য নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কেউ মারা গেলে তার সম্পদ তার নিকটাত্মীয়দের মাঝে আল্লাহর নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী ভাগ হবে। -এসব অংশ আল্লাহ নিজে নির্ধারণ করেছেন (যেমন: ৪:১১, ৪:১২, ৪:১৭৬ আয়াতে বিস্তারিত আছে)।
  • আল্লাহ সব কিছু দেখেন এবং জানেন। তাই উত্তরাধিকার বণ্টনের সময় অন্যায় বা গোপনীয়তা করলে তা আল্লাহর দৃষ্টিতে গোপন নয়। ]

আয়াত ০৪ : ৩৪

    • পুরুষরা নারীদের রক্ষণাবেক্ষণকারী, কারণ আল্লাহ তাদের এক অংশকে অন্য অংশের উপর শ্রেষ্ঠতা দিয়েছেন এবং কারণ পুরুষেরা নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে।
    • সৎ নারীরা হয় অনুগত এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতেও আল্লাহ যেভাবে হেফাজত করতে বলেছে, সেভাবে নিজেদের হেফাজত করে।
    • আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার তোমরা আশংকা কর,তাদের উপদেশ দাও, তারপর শয়নকক্ষে তাদের থেকে দূরে থাকো, এবং (সবশেষে) প্রয়োজন হলে হালকাভাবে শাসন করো।
    • আর যদি তারা তোমাদের কথা মেনে চলে, তবে তাদের উপর অন্য কোনো পথ খোঁজো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোচ্চ, মহাপরাক্রান্ত।

[ 🕌 হাদীস:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
"আল্লাহ্‌ ছাড়া যদি আমি কাউকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম, তবে স্ত্রীকে তার স্বামীকে সিজদা করার আদেশ দিতাম।"
📚 [তিরমিযী: হাদীস ১১৫৯, সহীহ হাদীস]

এখানে সিজদা করার অনুমতির কথা বলা হলেও, এটি আদেশস্বরূপ নয়, বরং স্ত্রীর ওপর স্বামীর হক ও মর্যাদা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাতে এই রূপকে ব্যবহার করা হয়েছে। ইসলামে সিজদা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্ধারিত, অন্য কাউকে সিজদা করা হারাম। এই হাদীসে স্বামীর অধিকারের গুরুত্ব বোঝাতে কেবল উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছে—যদি কাউকে সিজদা করার অনুমতি দেওয়া হতো, তবে সেটি স্বামীর জন্য হতো। ]


আয়াত ০৪ : ৩৫

    • আর যদি তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ বা বিরোধের আশঙ্কা করো,
    • তবে স্বামীর পক্ষ থেকে একজন সালিশকারী এবং স্ত্রীর পক্ষ থেকেও একজন সালিশকারী নিযুক্ত করো।
    • যদি তারা মীমাংসা করতে চায়, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তাদের মধ্যে মিল ঘটিয়ে দেবেন।
    • নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সব বিষয়ে ভালোভাবে খবর রাখেন।
  • যদি স্বামী-স্ত্রী সত্যিই সম্পর্ক ঠিক করতে চায়, → আল্লাহ তাদের অন্তর এক করে দেবেন এবং মিলনের পথ সহজ করে দেবেন।
  • আল্লাহ মানুষের অন্তরের নিয়ত, অভ্যন্তরীণ ব্যাপার ও গোপন কথাও জানেন। → তাই প্রকৃত সদিচ্ছা থাকলে আল্লাহর সাহায্য আসে।

আয়াত ০৪ : ৩৬

    • তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না।
    • আর সদ্ব্যবহার করো:
      • পিতা-মাতা,
      • আত্মীয়-স্বজন,
      • ইয়াতিম (এতিম),
      • মিসকীন (দরিদ্র),
      • নিকটবর্তী প্রতিবেশী,
      • দূরবর্তী প্রতিবেশী,
      • সাথি-সংগী,
      • মুসাফির (অতিথি),
      • এবং যাদেরকে তোমরা মালিকানায় রেখেছ (যেমন: দাস/কর্মচারী)।
    • নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই লোককে ভালোবাসেন না,
    • যে অহংকারী ও আত্মপ্রশংসাকারী।

[ এই আয়াতে বলা হয়েছে:

  • আল্লাহর ইবাদত করা এবং কাউকে তাঁর সঙ্গে শরিক না করার কথা প্রথমেই বলা হয়েছে, → কারণ এটিই ইসলামের মূলভিত্তি।
  • আল্লাহর ইবাদতের পরেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সম্পর্কের হক আদায়ে। যেমন:
    • মাতা-পিতা: সর্বোচ্চ সম্মান ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আচরণ।
    • আত্মীয়স্বজন: আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, সাহায্য করা।
    • ইয়াতিম ও মিসকিন: অসহায় ও দরিদ্রদের প্রতি সহানুভূতি।
    • প্রতিবেশী: নিকট ও দূরের প্রতিবেশীদের সাথে সদ্ব্যবহার।
    • সহচর: যেমন বন্ধু, সহযাত্রী বা জীবনসঙ্গী – তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার ।
    • মুসাফির: ভ্রমণরত ব্যক্তিকে সাহায্য করা।
    • দাস/কর্মচারী: অধীনস্থদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও ন্যায়।
  • যারা আত্মঅহংকারে ভোগে ও নিজেদের বড় বলে মনে করে, আল্লাহ তাদেরকে অপছন্দ করেন। ]

আয়াত ০৪ : ৩৭

    • যারা কৃপণতা করে এবং অন্যদেরও কৃপণতার নির্দেশ দেয়,
    • আর আল্লাহ তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা গোপন করে—
    • আমি কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।
  • এই আয়াতে আল্লাহ তিরস্কার করছেন সেইসব মানুষকে যারা নিজেরা দান করে না, বরং অন্যদেরও দান করতে নিরুৎসাহিত করে।
  • তাদেরকে আল্লাহ যে জ্ঞান, সম্পদ বা সৌভাগ্য দিয়েছেন, তারা তা গোপন করে রাখে। এর মাধ্যমে তারা অন্যদের উপকার থেকে বঞ্চিত করে।
  • এরা শুধু কৃপণই নয়, বরং কুফরি পথও বেছে নিয়েছে। তাদের জন্য অপমানজনক (লাঞ্ছনামূলক) শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে।

আয়াত ০৪ : ৩৮

    • আর যারা নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্য,
    • তারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না।
    • আর যার শয়তান বন্ধু হয়ে যায়—তাহলে সে কতই না মন্দ এক সঙ্গী!
  • এই আয়াতে আল্লাহ সতর্ক করছেন সেইসব লোকদের ব্যাপারে যারা দান করে, কিন্তু একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে লোককে দেখানো। এদের দানে কোনো নেক নিয়ত বা আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকে না।
  • তারা আসলে আল্লাহ বা পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে না। তাদের কাজ ও উদ্দেশ্য সবই দুনিয়াবি স্বীকৃতির জন্য।
  • যে ব্যক্তি শয়তানকে বন্ধু বানিয়ে নেয়,তার অবস্থা ভয়াবহ। শয়তান এক মন্দ সঙ্গী, যে ধীরে ধীরে মানুষকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যায়।

আয়াত ০৪ : ৩৯

    • তাদের কী ক্ষতি হতো যদি তারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনত
    • এবং আল্লাহ তাদেরকে যা দিয়েছেন তা থেকে (তাঁর রাস্তায়) ব্যয় করত?
    • আল্লাহ তো তাদের বিষয়ে সবকিছু জানেন।
  • আল্লাহ প্রশ্ন করছেন—তারা যদি ঈমান আনত এবং দান করত, তাহলে কী ক্ষতি হতো? বরং এতে তাদেরই উপকার হতো, তাদের দুনিয়া ও আখিরাত উজ্জ্বল হতো।
  • তারা যা কিছু দান করে, তা আল্লাহরই দেওয়া রিজিক। তাহলে সেই সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কৃপণতা কেন?
  • আল্লাহর জ্ঞান: আল্লাহ ভালো করেই জানেন কে কী নিয়ত করে, কী করে এবং কী পরিমাণে রিজিক পেয়েছে। তাঁর কাছ থেকে কিছুই গোপন নয়।

আয়াত ০৪ : ৪০

    • নিশ্চয়ই আল্লাহ একটি পরমাণু পরিমাণও জুলুম করেন না।
    • আর যদি কেউ একটি সৎকর্ম করে, তাহলে তিনি তা বহুগুণ বাড়িয়ে দেন
    • এবং নিজের পক্ষ থেকে বিশাল প্রতিদানও দান করেন।
  • আল্লাহর ন্যায়বিচার: আল্লাহ কোনো অন্যায় করেন না—অতি সামান্য পরিমাণ (যেমন ধূলিকণার মতো) জুলুমও তিনি করেন না। কেউ সামান্য ভালো কাজ করলেও, তা অবমূল্যায়ন হবে না।
  • সৎকর্মের পুরস্কার: একটি সৎকাজ করলে আল্লাহ:
    • তা দ্বিগুণ বা বহুগুণে বাড়িয়ে দেন,
    • আবার নিজের পক্ষ থেকেও বড় পুরস্কার দেন, যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।

আয়াত ০৪ : ৪১

    • তখন (এদের অবস্থা) কেমন হবে,
    • যখন আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব,
    • আর তোমাকে (হে নবী!) তাদের উপর সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব?

এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা ও বিচারের দৃশ্য তুলে ধরছেন।

  • প্রত্যেক জাতির জন্য সাক্ষী:
    • কিয়ামতের দিন প্রত্যেক জাতির ওপর একজন করে সাক্ষী (সাধারণত তাদের নিজ নিজ নবী) উপস্থিত হবেন,
    • তাঁরা সাক্ষী দেবেন: তাদের জাতিকে কী সত্য বার্তা দেওয়া হয়েছিল, এবং তারা তা মেনে চলেছিল কি না।
  • রাসূল ﷺ হবেন উম্মতের উপর সাক্ষী:
    • আল্লাহ নিজেই বলছেন: "আর তোমাকে (হে মুহাম্মদ ﷺ) আমরা এই উম্মতের উপর সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব।"
    • অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলবেন যে, তিনি আল্লাহর বাণী সঠিকভাবে পৌঁছে দিয়েছেন।

আয়াত ০৪ : ৪২

    • সেদিন, যারা কুফরি করেছিল এবং রাসূলের অবাধ্যতা করেছিল,
    • তারা কামনা করবে—যদি (তাদেরকে মাটির সাথে) সমান করে দেওয়া হতো!
    • আর তারা আল্লাহর নিকট কিছুই গোপন করতে পারবে না।
  • যারা কুফর ও অবাধ্যতা করেছিল:
    • তারা দুনিয়ায় রাসূলের (ﷺ ) ডাক অমান্য করেছিল,
    • কিয়ামতের দিন তাদের জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন শাস্তি।
  • লজ্জা ও দুঃখে তারা চাইবে:
  • “হায়! যদি আমাদেরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হতো!”
  • যেন তারা ছিলই না, অথবা নিষ্প্রাণ মাটি হয়ে যেত—এমন করুণ অনুতাপে ভুগবে।
  • তারা আল্লাহর কাছ থেকে কিছুই গোপন করতে পারবে না,
  • তাদের অন্তরের কথা, কুকর্ম—সব কিছু আল্লাহ জানেন এবং সেদিন প্রকাশিত হবে।

আয়াত ০৪ : ৪৩

  • হে মুমিনগণ!
    • তোমরা মদ্যপ অবস্থায় সালাতের ধারে-কাছেও যেয়ো না, যতক্ষণ না বুঝতে পারো তুমি কী বলছো।
    • আর তোমরা অপবিত্র অবস্থাতেও (সালাতে উপস্থিত হয়ো না)— যতক্ষণ না গোসল করো,
    • তবে যদি তোমরা পথচলতি/মুসাফির হও (তাহলে ব্যতিক্রম)।
    • আর যদি তোমরা অসুস্থ হও, অথবা সফরে থাকো, অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে,
    • অথবা তোমরা নারীদের সঙ্গে মিলিত হও, এবং তখন যদি পানি না পাও—
    • তবে পবিত্র মাটির সঙ্গে তায়াম্মুম করো,
    • এবং তা দিয়ে তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ (মুছে নাও)।
    • নিশ্চয়ই আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।
  • সালাতের আগে সচেতন থাকা জরুরি:
    • আগে মুসলমানদের মাঝে মদের প্রচলন ছিল। এই আয়াত ধাপে ধাপে মদ হারামের পথ খুলে দেয়।
    • কেউ যদি মদ্যপ হয়, সে যেন নামাজের কাছে না যায়—যতক্ষণ না সে বুঝতে পারে সে কী বলছে।
  • অপবিত্রতা ও নামাজ:
    • অপবিত্র (জুনুব) অবস্থায় নামাজ পড়া নয়, যতক্ষণ না গোসল করা হয়।
    • তবে ভ্রমণরত অবস্থায় কেউ যদি গোসলের সুযোগ না পায়, ব্যতিক্রমভাবে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
  • তায়াম্মুমের বিধান:
    • যদি পানি না পাওয়া যায় (অসুস্থতা, ভ্রমণ, প্রয়োজনীয়তা) তখন:
      • পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে।
      • কেবল মুখ ও হাত মাসেহ করতে হবে।

আয়াত ০৪ : ৪৪

  • হে মুহাম্মদ!
    • তুমি কি দেখো না তাদেরকে,
    • যাদেরকে কিতাবের (ধর্মগ্রন্থের) কিছু অংশ দেওয়া হয়েছিল—
    • তারা বিভ্রান্তি ক্রয় করছে (সঠিক পথ বিকিয়ে দিয়ে গোমরাহি বেছে নিচ্ছে),
    • আর চায় তোমরাও যেন পথভ্রষ্ট হয়ে যাও।
  • এই আয়াতে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের এক শ্রেণির কথা বলা হচ্ছে, যাদের কাছে আল্লাহর কিতাব (তাওরাত, ইনজিল) ছিল— তবু তারা জেনে বুঝে ভুল পথ বেছে নেয়।
  • ইয়াহুদি ও নাসারারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ঈমানদারদেরকেও পথভ্রষ্ট করতে চায়। তারা চায়, মুসলিমরাও যেন সত্যের পথ ছেড়ে বিভ্রান্তির পথে চলে যায়।
  • কুরআনের অন্যান্য আয়াতে তাদের সংখ্যা অনেক বলে উল্লেখ করা হয়েছে, এবং আরও বলা হয়েছে—তারা মুসলিমদের ঈমান হারিয়ে আবার কুফরের দিকে ফিরে যাওয়ার কামনা করে।
  • যেমন, আল্লাহ বলেন:
    • “কিতাবীদের অনেকেই কামনা করে, যদি তারা তোমাদেরকে তোমাদের ঈমান আনার পর আবার কাফের বানিয়ে ফিরিয়ে নিতে পারত। সত্য তাদের কাছে স্পষ্ট হওয়ার পরও, তারা কেবল নিজেদের পক্ষ থেকে বিদ্বেষ ও হিংসার বশবর্তী হয়েই এটা করে।” - (সূরা আল-বাকারা: ১০৯)
    • এছাড়াও, আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে: "কিতাবীদের একদল চায়, যেন তোমাদেরকে তারা বিভ্রান্ত করতে পারে। অথচ তারা নিজেদেরকেই বিভ্রান্ত করছে, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না।” (সূরা আলে ইমরান: ৬৯)
  • ইবন আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন — ইয়াহুদি নেতা রিফা’আ ইবন যায়েদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে দেখা করলে মুখে কটাক্ষমূলক ভঙ্গিতে বলত: “হে মুহাম্মাদ! তুমি আমাদের ভালো করে শোনাও, যেন আমরা বুঝতে পারি।” কিন্তু সে মূলত কুরআনের দোষ-ত্রুটি খোঁজার চেষ্টা করত। 🔸 তখনই এই আয়াত (৪:৪৪) নাযিল হয় এবং তাদের ষড়যন্ত্রমূলক আচরণ আল্লাহ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন। - [সূত্র: আত-তাফসীরুস সহীহ]

আয়াত ০৪ : ৪৫

    • আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের সম্পর্কে সবচেয়ে ভালোভাবে জানেন।
    • আল্লাহই যথেষ্ট তোমাদের অভিভাবক হিসেবে,
    • এবং আল্লাহই যথেষ্ট তোমাদের সাহায্যকারী হিসেবে।
  • পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেছিলেন—ইহুদি ও খ্রিস্টানদের এক শ্রেণি ইচ্ছা করে মুমিনদের পথভ্রষ্ট করতে চায়।
  • এই আয়াতে মুমিনদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে—তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আল্লাহ জানেন এবং তিনিই রক্ষা করবেন।

আয়াত ০৪ : ৪৬

    • ইহুদিদের মধ্যে কিছু লোক (তাদের কিতাবের) কথা বিকৃত করত
    • এবং (নবী মুহাম্মদকে উদ্দেশ করে বিদ্রূপ করে) বলত, “আমরা শুনেছি, কিন্তু অমান্য করেছি” এবং “শোন, (কিন্তু যেন) তুমি না শুনতে পাও।”
    • তারা আরও বলত, “রায়িনা”, যেন এটাও তাচ্ছিল্যের একটি রূপ, আর তা বলত নিজেদের জিহবা কুঞ্চিত করে এবং দ্বীনের প্রতি তাচ্ছিল্ল ।
    • তারা যদি বলত, “আমরা শুনেছি এবং মান্য করেছি” এবং বলত, “শোনো এবং আমাদের প্রতিখেয়াল রাখুন (উনযুরনা),” তাহলে তা তাদের জন্য ভালো এবং যথাযথ হতো।
    • কিন্তু তারা অবিশ্বাস করেছে, তাই আল্লাহ তাদেরকে অভিশপ্ত করেছেন।
    • ফলে তাদের মধ্যে খুব অল্প লোকই বিশ্বাস করবে।
  • ইয়াহুদিদের অনেক ধৃষ্টতা ও অপকর্মের মধ্যে একটি ছিল—তারা মুখে বলত, "আমরা শুনলাম", কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বলত, "আমরা অমান্য করলাম"। এর মাধ্যমে তারা প্রকাশ্যে কিংবা নিজেদের মধ্যে বলত যে, নবী মুহাম্মদ ﷺ -এর কথার তারা কোনো আনুগত্য করবে না। কেউ কেউ এই কথা গোপনে বলত, আবার কেউ তা প্রকাশ্যেই বলত, যেন এতে তাদের সাহস বা বিদ্রুপ প্রকাশ পায়।
  • তারা কথার শব্দ বিকৃত করে এবং ঠাট্টা-মশকরা করে আল্লাহর নবীকে অবমাননা করত।
  • “রায়িনা” শব্দটি তারা এমনভাবে উচ্চারণ করত, যাতে এর অপমানসূচক অর্থ বোঝায় (আরবি ভাষায় এর একটি অর্থ হয়: ‘হে নির্বোধ’)।
  • এই আয়াতের শেষে বলা হয়েছে—আল্লাহ তাদের অভিশাপ দিয়েছেন, ফলে তারা খুব অল্পসংখ্যকই ঈমান আনবে। এখানে দুটি ব্যাখ্যা রয়েছে:
    • সংখ্যার দিক থেকে ব্যাখ্যা:
      • ইয়াহুদিদের মধ্যে যারা সত্যিকারভাবে ঈমান এনেছে, তাদের সংখ্যা ছিল এত কম যে, দশজন পূর্ণ মুমিনও পাওয়া কঠিন ছিল।
    • আস্তিকতা বা বিশ্বাসের পরিমাণের দিক থেকে ব্যাখ্যা:
      • কেউ কেউ হয়তো ঈমান এনেছে, কিন্তু তা আংশিক বা সীমিত বিষয়ের ওপর। অথচ প্রকৃত ঈমানের দাবি হলো—আল্লাহর সব বাণী ও সব রসূলের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা।

আয়াত ০৪ : ৪৭

  • হে কিতাবপ্রাপ্তগণ,
    • তোমরা সে কিতাবের (কুরআন) প্রতি ঈমান আনো যা আমি অবতীর্ণ করেছি—
    • যা তোমাদের কাছে থাকা কিতাবকে সত্যায়ন করে—
    • তোমাদের মুখমণ্ডল বিকৃত করে পেছনে ফিরিয়ে দেওয়ার আগে,
    • অথবা তাদেরকে অভিশপ্ত করার আগে,
    • যেমন আমি অভিশপ্ত করেছিলাম ‘শনিবার পালনকারীদের’ (আসহাবুস সাবত)।
    • আল্লাহর আদেশ তো অবশ্যই কার্যকর হয়।
  • এই আয়াতে আল্লাহ আহ্বান জানাচ্ছেন ইহুদি ও খ্রিস্টানদের, যারা কিতাব পেয়েছিল।
    • তাদের প্রতি আহ্বান—তোমরা কুরআনে ঈমান আনো, কারণ এটা তোমাদের কিতাবেরই সত্যায়নকারী।
  • আল্লাহ সতর্ক করছেন—
    • তোমরা যদি ঈমান না আনো, তাহলে তোমাদের মুখ বিকৃত করে পেছনে ফিরিয়ে দেওয়া হতে পারে,
    • অথবা আসহাবুস সাবতের মতো অভিশপ্ত করে দেওয়া হবে।
  • “আসহাবুস সাবত” বা “শনিবারের লোকেরা” ছিল একদল ইহুদি,
    • যারা শনিবার মাছ শিকার করে আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করেছিল,
    • ফলে তাদেরকে বানর রূপে রূপান্তর করে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।
  • “আল্লাহর আদেশ কার্যকর হতেই থাকে”—কারণ তিনি সর্বশক্তিমান।

আয়াত ০৪ : ৪৮

    • নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না,
    • তাঁর বাইরে যাকে ইচ্ছা, তাকে ক্ষমা করে দেন।
    • আর কেউ আল্লাহর সঙ্গে শরিক করলে, সে এক মহাপাপের অপবাদ রচনা করলো।
  • এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন, শিরক—অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা — একমাত্র পাপ, যা আল্লাহ ক্ষমা করেন না, যদি কেউ অনুতাপ না করে তাওবা ছাড়া মারা যায়।
  • কিন্তু আল্লাহ অন্যান্য পাপ (যেমন: গুনাহ, জুলুম, অন্যায়, ব্যভিচার, ইত্যাদি) তাঁর ইচ্ছানুযায়ী যাকে চান, ক্ষমা করতে পারেন।
  • শিরক করার অর্থ — আল্লাহর সঙ্গে অন্য কারো উপাসনা করা, অথবা কাউকে আল্লাহর মতো ক্ষমতাবান ভাবা বা ডাকা।
  • কেউ যদি শিরক করে, সে আল্লাহর বিরুদ্ধে এক ভয়ানক অপবাদ রচনা করেছে, যা একটি ভয়াবহ অপরাধ এবং চরম জুলুম।
  • ইবন কাসীর (রহঃ) বলেন—জুলুম (অন্যায়) তিন প্রকার:
    • সবচেয়ে বড় জুলুম: আল্লাহর সাথে শির্ক করা — এটা আল্লাহ কখনোই মাফ করবেন না যদি কেউ তাওবা না করে।
    • আল্লাহর হক নষ্ট করা: ফরজ ইবাদাতে গাফিল থাকা ইত্যাদি — আল্লাহ চাইলে মাফ করবেন।
    • মানুষের হক নষ্ট করা: কারো অধিকার নষ্ট করলে — ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি না মাফ করলে আল্লাহও ছাড়বেন না।

আয়াত ০৪ : ৪৯

    • তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা নিজেদেরকে পবিত্র মনে করে?
    • অথচ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন।
    • আর তাদের প্রতি খেজুরের আঁটির ফাটলের মতো সামান্যতমও অন্যায় করা হবে না।
  • ইয়াহুদীরা নিজেদের বড়াই করত, তাদের মুখে শুনতে পাওয়া যেত, “আমরা আল্লাহর পুত্র” বা “আমরা তাঁর প্রিয়পাত্র”।
  • কিন্তু আল্লাহ বলেন, কাউকে প্রশংসিত বা পবিত্র করা তাঁরই অধিকার, আর কে প্রকৃতপক্ষে পবিত্র তা তিনিই জানেন।
  • “ফাতীল” শব্দের অর্থ খেজুরের আঁটির ফাটলে থাকা অতি সূক্ষ্ম ও পাতলা সুতোর মত অংশ। অর্থাৎ, এমন ক্ষুদ্রতম পরিমাণেও কোনো অন্যায় বা অত্যাচার তাদের উপর করা হবে না।

আয়াত ০৪ : ৫০

    • দেখুন! তারা আল্লাহ সম্বন্ধে কিরূপ মিথ্যা উদ্ভাবন করে;
    • আর প্রকাশ্য পাপ হিসেবে এটাই যথেষ্ট।
  • এই আয়াত আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা রচনা ও ধর্মের প্রকৃত অর্থ বিকৃত করার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছে।
  • এখানে মূলত ইয়াহুদীদের একটি অংশের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে যারা আল্লাহর নামে মিথ্যা গল্প বানাতো।
  • যারা আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনা করে, তারা এক বড় পাপের সম্মুখীন হয়।
  • এই ধরনের মিথ্যা তৈরি করা বড় পাপ, যা আল্লাহর কাছে স্পষ্ট অন্যায়।

আয়াত ০৪ : ৫১

    • তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে কিতাবের কিছু অংশ দেয়া হয়েছে?
    • তারা বিশ্বাস করে জিবত ও তাগূতের প্রতি
    • এবং কাফিরদেরকে বলে — “এই লোকেরা ঈমানদারদের চেয়ে সঠিক পথে রয়েছে।”
  • এই আয়াতে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের এক শ্রেণির ভণ্ডামি ও দ্বিমুখীতার সমালোচনা করা হয়েছে।
  • তারা তাওরাতের জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও জাদু (জিবত) ও শয়তানি শক্তি (তাগূত)-এর প্রতি বিশ্বাস করত।
  • তারা নবী মুহাম্মদ ﷺ এবং তাঁর অনুসারীদের অস্বীকার করে মুশরিকদের (যারা ঈমান আনেনি) প্রশংসা করত।
  • তারা বলত — “মুশরিকরা মুসলমানদের চেয়ে সঠিক পথে আছে”— এটি ছিল স্পষ্ট পথভ্রষ্টতা ও ঈমান বিরোধী বক্তব্য।
  • তারা প্রকৃতপক্ষে বিভ্রান্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

আয়াত ০৪ : ৫২

    • তারাই হলো, যাদের ওপর আল্লাহ্‌র লানত নেমে এসেছে।
    • আর আল্লাহ যাকে লানত করেন,
    • আপনি তার জন্য কখনো কোনো সাহায্যকারী খুঁজে পাবেন না।
  • এই আয়াতে পূর্বের আয়াতের (৪:৫১) আলোকে সেইসব লোকদের চূড়ান্ত অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে, যারা সত্য গোপন করে, কুফর ও তাগূতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং মুমিনদের তুলনায় কাফিরদের উত্তম বলে।
  • আল্লাহ তাদের প্রতি তাঁর অভিশাপ বা লানত করেছেন — অর্থাৎ তাঁদের রহমত থেকে বঞ্চিত করেছেন।
  • আল্লাহ যার ওপর লানত করেন, তার জন্য কারো পক্ষেই কিছু করা সম্ভব নয় — অর্থাৎ কেউ তাকে হেদায়েত বা পরিত্রাণ দিতে পারবে না।

আয়াত ০৪ : ৫৩

    • তাদের কি রাজত্বে কোনো অংশ আছে? (যদি থাকত,)
    • তবে তারা মানুষকে একটি ‘নকীর’ পরিমাণও দিত না।
  • এই আয়াতে কাফির ও মুনাফিকদের হিংসা ও সংকীর্ণতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
  • তারা যদি শাসনক্ষমতাও পেত, তাহলেও তারা কারো কোনো কল্যাণ করত না — এমনকি নকীর পরিমাণ সামান্য জিনিসও দিত না।
    • نَقِيرًا (নকীর): খেজুরের আঁটির পিঠে থাকা অতিক্ষুদ্র গর্ত বা রেখা — এটি খুবই ক্ষুদ্র জিনিস বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
  • এতে বোঝানো হয়েছে, তাদের অন্তরে হিংসা ও কৃপণতা এত বেশি যে, তারা কারও ভালো কিছু হোক তা চায় না।

আয়াত ০৪ : ৫৪

    • তারা কি ঈর্ষা করে মানুষের প্রতি,
    • যাদেরকে আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ দান করেছেন?
    • অথচ আমি তো ইবরাহিমের বংশধরদেরকে কিতাব ও হিকমত দিয়েছি
    • এবং তাদেরকে এক বিশাল রাজত্ব দান করেছি।
  • এই আয়াত মূলত ইয়াহুদীদের হিংসা ও ঈর্ষার মানসিকতা প্রকাশ করছে — তারা নবী মুহাম্মদ (ﷺ ) এবং তাঁর অনুসারীদের প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিলো, কারণ আল্লাহ তাঁদেরকে নবুয়ত ও জ্ঞান দিয়েছেন।
  • আল্লাহ বলেন, নবুয়ত, জ্ঞান ও রাজত্ব তাঁর পক্ষ থেকে একটি ফজল বা অনুগ্রহ, যা তিনি যাকে ইচ্ছা দেন।
  • অতীতে যেমন ইবরাহিম (আঃ)-এর বংশধরদের — যেমন ইসহাক, ইয়াকুব, ইউসুফ, দাঊদ, সুলায়মান (আঃ)-দের কিতাব, হিকমত ও রাজত্ব দেওয়া হয়েছিল, তেমনই মুহাম্মদ (ﷺ )-কে নবুয়ত দেওয়া হয়েছে।

আয়াত ০৪ : ৫৫

    • অতঃপর তাদের কিছু সংখ্যক তাঁর (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ) উপর ঈমান এনেছে,
    • আর কিছু সংখ্যক তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
    • বস্তুতঃ দগ্ধ করার জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট।
  • পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছিল, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ দান করেন — যেমন নবুয়ত, কিতাব, হিকমত ও রাজত্ব। এই আয়াতে বলা হচ্ছে, মানুষদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া ছিল ভিন্ন ভিন্ন।
  • কেউ নবী মুহাম্মদ (ﷺ)-এর উপর ঈমান এনেছে, আর কেউ ঈর্ষা, অহংকার বা গোঁড়ামির কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
  • যারা সত্যকে অস্বীকার করেছে, তাদের জন্য আল্লাহ জাহান্নামকে যথেষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন — যা জ্বলন্ত আগুন ও কঠিন শাস্তির স্থান।

আয়াত ০৪ : ৫৬

    • যারা আমার নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করেছে, আমি অবশ্যই তাদের আগুনে নিক্ষেপ করব।
    • যখনই তাদের চামড়া পুড়ে যাবে, তখনই আমি তাদের নতুন চামড়া পরিবর্তে দেবো,
    • যেন তারা শাস্তির স্বাদ বারবার অনুভব করতে পারে।
    • নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
  • এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর আয়াত অস্বীকারকারীদের ভয়াবহ পরিণতির বর্ণনা দিচ্ছেন।
  • দোজখের আগুনে তাদের চামড়া পুড়ে গেলে পুনরায় নতুন চামড়া সৃষ্টি করা হবে — যাতে তারা যন্ত্রণার পূর্ণ স্বাদ পায় বারবার।
  • চামড়া মানবদেহে অনুভূতির প্রধান উৎস। তাই শাস্তি বারবার পূর্ণভাবে অনুভব করার জন্যই এ ব্যবস্থা।
  • আল্লাহ সবকিছু অত্যন্ত জ্ঞান ও পরাক্রম দিয়ে পরিচালনা করেন — কেউই অন্যায়ভাবে শাস্তি পাবে না।

আয়াত ০৪ : ৫৭

    • আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে,
    • আমি অবশ্যই তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাব,
    • যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত।
    • সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
    • সেখানে তাদের জন্য থাকবে পবিত্র সঙ্গিনীগণ
    • এবং আমি তাদের প্রবেশ করাব চিরস্নিগ্ধ গভীর ছায়ার মধ্যে।
  • এই আয়াতে আল্লাহ ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
  • জান্নাত হবে এমন একটি স্থান, যেখানে নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত হবে — শান্তি ও আরামের প্রতীক।
  • জান্নাতবাসীরা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে — কখনো তা শেষ হবে না।
  • সেখানে থাকবে পবিত্র জীবনসঙ্গিনী — যারা অপবিত্রতা, ক্লেশ বা কষ্ট থেকে মুক্ত।
  • আর থাকবে আরামদায়ক চিরস্নিগ্ধ গভীর ছায়া — যা শান্তি ও প্রশান্তির প্রতীক।

আয়াত ০৪ : ৫৮

    • নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দেন যে,
      • তোমরা আমানতগুলো তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দাও।
    • আর যখন মানুষের মাঝে বিচার করো, তখন ন্যায়বিচারসহকারে করো।
    • নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কত উত্তম উপদেশ দেন।
    • নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
  • এই আয়াতটি মক্কা বিজয়ের সময় অবতীর্ণ হয়। তবে এই আয়াতের অন্তর্নিহিত ঘটনা শুরু হয়েছিল হিজরতের আগেই।

    হিজরতের পূর্বে একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ কিছু সাহাবীকে নিয়ে বায়তুল্লাহ (কা‘বা শরীফ)-এর উদ্দেশ্যে গমন করেন। তখন উসমান ইবন তালহা কা‘বা শরীফের চাবির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি এবং কুরায়শদের একজন ছিলেন।
    রাসূলুল্লাহ ﷺ কা‘বায় প্রবেশ করতে চাইলে উসমান তাঁকে বাধা দেন, এবং এমনকি কিছু কটুক্তিও করেন।
    নবী ﷺ অত্যন্ত ধৈর্যসহকারে তা সহ্য করেন এবং বলেন:
    “উসমান! এমন এক দিন আসবে, যেদিন তুমি এই চাবি আমার হাতে দেখবে। আমি যাকে ইচ্ছা তা দিয়ে দেব।”
    উসমান উত্তরে কটাক্ষ করে বলেন: “সেই দিন যদি আসে, তাহলে বুঝব, কুরায়শ ধ্বংস হয়ে গেছে।”

    রাসূলুল্লাহ ﷺ মক্কা বিজয়ের পর কা‘বা শরীফে প্রবেশ করতে চাইলেন। তখন কা‘বার চাবি আনা হলো এবং তিনি তা দিয়ে কা‘বায় প্রবেশ করলেন ও তওয়াফ ও নামাজ আদায় করলেন।
    তারপর উপরোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলো: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেন, তোমরা আমানত তাদের নিকট পৌঁছে দাও যারা তার উপযুক্ত...”
    এরপর নবী ﷺ উসমান ইবন তালহাকে ডেকে আনালেন এবং চাবি তার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন:
    এই চাবি তোমার এবং তোমার বংশধরদের কাছেই থাকবে। কেবল কোনো জালেমই তা তোমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবে।”

    এই ঘোষণার পর উসমান ইবন তালহা (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন।
  • এই আয়াতে আল্লাহ আমানতের হক যথাযথভাবে আদায় করার আদেশ দিচ্ছেন — যেকোনো দায়িত্ব, সম্পদ, অথবা গোপন তথ্য যা কাউকে দেওয়া হয়েছে, তা তার প্রাপকের নিকট ফেরত দেওয়া আবশ্যক।

আয়াত ০৪ : ৫৯

  • হে ঈমানদারগণ!
    • আল্লাহর আনুগত্য করো,
    • রাসূলের আনুগত্য করো
    • এবং তোমাদের মধ্য থেকে যাদের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে তাদেরও।
    • আর যদি কোনো বিষয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়, তবে তা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট , যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখো।
    • এটাই উত্তম ও পরিণামের দিক থেকে সবচেয়ে ভাল।
  • মুসলিমদের জন্য সর্বপ্রথম কর্তব্য হল আল্লাহর আদেশ মানা এবং রাসূল (সাঃ)-এর নির্দেশ অনুসরণ করা।
  • যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে (যেমন: শাসক, বিচারক, ইমাম, পণ্ডিত) — তাদের কথা মানতে হবে, যদি তারা কুরআন-সুন্নাহর বিপরীত না বলেন।
  • কোনো দ্বিধা, মতবিরোধ বা সমস্যা দেখা দিলে কুরআন ও রাসূলের (সাঃ) নির্দেশের আলোকে সমাধান খুঁজতে হবে।
  • এইভাবে বিচার করা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া — এটাই প্রকৃত ঈমানদারদের পরিচয়, যারা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস রাখে।

আয়াত ০৪ : ৬০

    • তুমি কি দেখোনি তাদের, যারা দাবি করে যে তারা তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্বে যা নাজিল হয়েছে তাতে ঈমান এনেছে,
    • অথচ তারা চায় ফয়সালা করতে তাগূতের (অবিশ্বাসী শাসক বা শরিয়তবিরোধী বিচারব্যবস্থার) কাছে,
    • যদিও তাদেরকে তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
    • আর শয়তান চায়, তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে ।
  • তাগূত অর্থ — এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যারা আল্লাহর বিধান অস্বীকার করে এবং তাঁর পরিবর্তে অন্য আইন বা মত অনুসরণ করে। যেমন: আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে মানবরচিত আইন অনুযায়ী ফয়সালা করা।
  • এই আয়াতে বলা হয়েছে, কিছু লোক মুখে বলে তারা ঈমান এনেছে, কিন্তু তারা ইসলামি বিধান অনুযায়ী নয় বরং তাগূতের বিধানে বিচার চাইছে। এটা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।
  • আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন — তাগূতের অস্বীকার করা বাধ্যতামূলক। যারা বিশ্বাস করে অথচ তাগূতের ফয়সালায় যায়, তারা আসলে ঈমানের দাবির সাথে প্রতারণা করছে।
  • শয়তান চায় মানুষ ইসলাম থেকে ধীরে ধীরে এমনভাবে দূরে সরে যাক, যেন তারা একেবারে বিভ্রান্তির অতল গহ্বরে তলিয়ে যায়।

আয়াত ০৪ : ৬১

    • তাদেরকে যখন বলা হয়, ‘আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তার দিকে এবং রসূলের দিকে এসো। ’
    • তখন তুমি দেখতে পাবে মুনাফিকরা তোমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় একেবারে সরাসরি।
  • মুনাফিকদের আসল চেহারা:
    • যখন ইসলামী বিধান অনুযায়ী চলতে বলা হয় বা রাসূল (সা.)-এর আদেশ মানতে বলা হয় — তখন মুনাফিকরা সাড়া দেয় না, বরং তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। এটাই তাদের প্রকৃত পরিচয়।
  • তারা মুখে ঈমানের দাবি করে, কিন্তু কাজের সময় মুখ ফিরিয়ে নেয়। :
    • আল্লাহ ও রাসূলের দিকে আহ্বান মানে হচ্ছে: কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার দাওয়াত। এই আহ্বানে যারা সাড়া দেয় না, তারা প্রকৃত মুমিন নয়।
  • ‘তোমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়’—
    • এখানে রাসূল (সা.)-এর দিক থেকে দূরে সরে যাওয়ার অর্থ হলো শরিয়তের নির্দেশ উপেক্ষা করা, নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ফয়সালা খোঁজা।
  • প্রকৃত মুমিনরা কখনো মুখ ফিরিয়ে নেয় না। বরং তারা আন্তরিকভাবে আল্লাহ ও রাসূলের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। আল্লাহ বলেন:
    "মু’মিনদের কথা তো এই—যখন তাদের মধ্যে বিচার ফয়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে আহ্বান করা হয়, তখন তারা বলে, 'আমরা শুনেছি ও মান্য করেছি।' এবং তারাই হলো সফলকাম।" — সূরা আন-নূর (২৪:৫১

আয়াত ০৪ : ৬২

    • তাহলে তাদের অবস্থা কী হবে, যখন তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফলে কোনো বিপদে পতিত হবে,
    • আর তখন তারা তোমার কাছে এসে আল্লাহর নামে শপথ করবে যে, “আমরা কল্যাণ এবং সম্প্রীতি ব্যতীত অন্য কিছুই চাইনি ।”
  • এই আয়াত মুনাফিকদের ভণ্ডামি উন্মোচন করে।
    তারা আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে অন্য কারো ফয়সালা চায় (যেমনঃ তাগুতের কাছে), কিন্তু বিপদে পড়লে বা মুখোশ খুলে পড়লে তারা দুঃখ প্রকাশ করে এবং নিজেদের কাজকে ভাল উদ্দেশ্যের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করে।
  • তারা তখন শপথ করে বলবে যে তারা শুধু শান্তি বা মীমাংসার চেষ্টা করছিল। কিন্তু এটা ছিল এক ধোঁকা ও আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা।

আয়াত ০৪ : ৬৩

    • এরাই তারা, যাদের অন্তরে কী আছে, তা আল্লাহ জানেন।
    • সুতরাং আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন, তাদের উপদেশ দিন,
    • এবং তাদেরকে এমন ভাষায় বলুন, যা তাদের অন্তরে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।
  • “আল্লাহ জানেন তাদের অন্তরে কী আছে” — এ কথার মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে, তারা মুখে যা-ই বলুক, তাদের হৃদয়ের ভেতরের কপটতা ও ঈমানহীনতা আল্লাহর কাছে স্পষ্ট।
  • "তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন" — অর্থাৎ, তাদের ভণ্ডামির জবাবে কঠোর ব্যবস্থা না নিয়ে ধৈর্য ধরুন, কারণ তাদের বিচার আল্লাহ করবেন।
  • "তাদের উপদেশ দিন" — মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পরও তাদেরকে ছাড় দেয়া নয় বরং নরমভাবে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া, যাতে তারা সংশোধিত হতে পারে।
  • "বলুন এমন কথা যা গভীরভাবে প্রভাব ফেলে" — উপদেশ এমনভাবে বলুন যা তাদের হৃদয়কে নরম করে, বিবেক জাগ্রত করে, এবং কপটতা ত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে।

আয়াত ০৪ : ৬৪

    • আমি যে কোনো রাসূলকেই প্রেরণ করেছি, কেবল এই জন্য যে, যেন আল্লাহর আদেশে তার আনুগত্য করা হয়।
    • আর যদি তারা নিজেদের উপর জুলুম করার পর আপনার কাছে এসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইতেন,
    • তাহলে তারা অবশ্যই আল্লাহকে পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুরূপে পেত।
  • এই আয়াতে বুঝানো হয়েছে, রাসূলকে পাঠানো হয়েছে তাঁর আদেশ পালন ও অনুসরণ করার জন্য। যারা অন্যায় করে, তারা যদি অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চায় এবং রাসূল তাদের জন্য সুপারিশ করেন, তবে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন, কারণ তিনি পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
  • আল্লাহ নবী ও রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন এই জন্য যে, মানুষ তাঁদের অনুসরণ করবে, তাঁদের আদর্শ গ্রহণ করবে এবং তাঁদের মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম মেনে চলবে।
  • যারা অন্যায় করেছে, আল্লাহ তাদেরকে পুরোপুরি ছাড় দেননি—বরং তাদেরকে অনুতাপ ও সংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন।
  • নবী (সা.)-এর দরজায় গিয়ে যদি তারা সত্যিকারে তওবা করে ও ক্ষমা চায়, এবং তিনি যদি তাদের জন্য সুপারিশ করেন— তবে আল্লাহ তা কবুল করে নেন।
  • যারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বা পথভ্রষ্ট হয়েছে, তাদের সঙ্গে বিরক্তি বা তিরস্কারের ভাষা নয়, বরং সহানুভূতির সুরে, কোমলভাবে উপদেশ দিন — যাতে তাদের হৃদয় নরম হয়, বিবেক জাগ্রত হয়, এবং তারা সংশোধনের দিকে ফিরে আসে
  • এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিষ্কার করা দরকার:
    • এই আয়াতে মূলত রাসূলুল্লাহ ﷺ জীবিত থাকা অবস্থায় তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য আসার নির্দেশ;
    • মৃত্যুর পর কবরস্থানে গিয়ে তার কাছে দো‘আ বা সুপারিশ চাওয়াকে বিদআত বা শির্ক ।

আয়াত ০৪ : ৬৫

    • কিন্তু না, আপনার প্রতিপালকের শপথ!
    • তারা কখনোই ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তারা আপনাকে নিজেদের বিবাদের বিচারক হিসেবে মেনে নেয়,
    • তারপর আপনি যে রায় দেন, তা নিয়ে তারা অন্তরে কোনো সংকোচ অনুভব না করে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে না নেয়।
  • এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছেন, ঈমান তখনই পূর্ণ হয় যখন একজন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ– এর রায়কে চূড়ান্ত বলে মেনে নেয়, এবং অন্তরে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ বা অস্বস্তি পোষণ না করে।
  • এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ– এর চাচাতো ভাই যুবায়র ইবন আওয়াম (রাঃ) এবং এক আনসারী মধ্যে খেজুর বাগানে সেচের পানি নিয়ে বিরোধ হয়। রাসূল ﷺ বিষয়টি শুনে ন্যায়সঙ্গতভাবে যুবায়ের (রাঃ) পক্ষে রায় দেন। এতে আনসারী ব্যক্তি বলল, “আপনি তো আপনার আত্মীয়কে পক্ষপাত করছেন।” এ বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের কারণেই এ আয়াত নাজিল হয়। [বুখারীঃ ২৩৫৯, ২৩৬০, মুসলিমঃ ২৩৫৭]

আয়াত ০৪ : ৬৬

    • আর যদি আমি তাদের উপর এই নির্দেশ দিতাম:
    • “তোমরা নিজেদের হত্যা করো” অথবা “তোমরা তোমাদের ঘরবাড়ি ত্যাগ করো,”
    • তাহলে তারা তা পালন করত না—তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ছাড়া।
    • অথচ যদি তারা সেইসব বিষয় পালন করত, যেগুলোর মাধ্যমে তাদের উপদেশ দেওয়া হয়,
    • তবে তা তাদের জন্য উত্তম হতো এবং তাদের ঈমান আরও দৃঢ় ও মজবুত হতো।
  • এই আয়াতে আল্লাহ মানুষের আনুগত্যের প্রকৃত মান যাচাই করার একটি ভার্চুয়াল বা কাল্পনিক উদাহরণ দিয়েছেন। বলা হচ্ছে, যদি আল্লাহ তাদের উপর খুব কঠিন হুকুম দিতেন—যেমন, নিজেদের হত্যা করতে বা ঘর ছেড়ে চলে যেতে—তবে অধিকাংশই তা মানত না, শুধু অল্প কয়েকজন ছাড়া।
  • কাতাদা (রহ.) বলেন: এখানে ইয়াহুদীদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে। তাদের পূর্বপুরুষদের তাওবা কবুলের জন্য যেমন মূসা (আ.) নির্দেশ দিয়েছিলেন নিজেদেরকে হত্যা করতে (সূরা আল-বাকারা ২:৫৪), তেমনি এই প্রজন্মকে যদি তেমন কঠিন নির্দেশ দেওয়া হতো, তাহলেও তারা তা অমান্য করত।
    আসলে, তাদের প্রতি আল্লাহর হুকুম ছিল অনেক সহজ ও বাস্তবসম্মত। কিন্তু তবুও তারা তা এড়িয়ে গিয়েছিল। এটা স্পষ্ট করে দেয়, তাদের ঈমান শুধু মুখের কথা ছিল, আন্তরিক আনুগত্যের অভাব ছিল।

[সূরা আল-বাকারা ২:৫৪ - "আর মূসা যখন আপন সম্প্রদায়ের লোককে বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের প্রতি ঘোর অনাচার করেছ। সুতরাং তোমরা তোমাদের স্রষ্টার দিকে ফিরে যাও (তওবা কর) এবং তোমরা নিজেদেরকে হত্যা কর। তোমাদের স্রষ্টার নিকট এটাই শ্রেয়। তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাপরায়ণ হবেন। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" ]

[ কাতাদা (রহ.) হলেন তাবেয়ীন যুগের একজন বিশিষ্ট মুফাসসির, হাদীস বর্ণনাকারী এবং ইলমে তাফসীর ও হাদীসে গভীর জ্ঞানসম্পন্ন আলেম।
পূর্ণ নাম: কাতাদা ইবন দিআমা আস-সাদূসী
জন্ম: প্রায় ৬০ হিজরি সালে, বাসরা (ইরাক) শহরে।
মৃত্যু: ১১৭ হিজরি, হজ্জ পালন শেষে মক্কা থেকে ফেরার পথে ইন্তেকাল করেন। ]


আয়াত ০৪ : ৬৭

    • তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে দিতাম এক মহা পুরস্কার।

যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ মেনে নিত এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকত, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে এক মহান প্রতিদান দিতেন। এই পুরস্কার হতে পারত দুনিয়াতে সম্মান ও নিরাপত্তা এবং আখিরাতে জান্নাত ও চিরন্তন সুখ।


আয়াত ০৪ : ৬৮

    • আর আমি অবশ্যই তাদেরকে সরল পথের দিকে পরিচালিত করতাম।

যদি তারা সত্যিকারভাবে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করত এবং অন্তর দিয়ে আল্লাহর বিধান মেনে নিত, তবে আল্লাহ তাদেরকে দ্বীনের সঠিক পথ, হিদায়াতের পথ এবং জান্নাতের পথ দেখাতেন।


আয়াত ০৪ : ৬৯

    • আর কেউ আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করলে
    • সে নবী, সিদ্দীক , শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ যাদের প্রতি আল্লাহ্‌ অনুগ্রহ করেছেন - তাদের সঙ্গী হবে
    • আর সঙ্গী হিসাবে এরা কত উত্তম সঙ্গী!

যারা আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ মেনে চলে, তারা কিয়ামতের দিন সেই সব সম্মানিত ব্যক্তিদের সঙ্গ লাভ করবে, যাদের আল্লাহ তাঁর বিশেষ রহমত ও পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। এই শ্রেণির মানুষরা হলো:

  • নবী : যাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি পেয়েছেন এবং মানবজাতিকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন।
  • সিদ্দীক : যারা সর্বদা সত্যে অটল, ঈমানে সুদৃঢ় এবং সত্যের পক্ষে জীবন উৎসর্গ করেছেন (যেমন: আবু বকর সিদ্দীক রা.)।
  • শহীদ : যারা আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করেছেন।
  • সৎকর্মশীল : যারা জীবনভর নেক আমল করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেছেন।

আল্লাহ বলছেন, এরা উত্তম বন্ধুবান্ধব, উত্তম সঙ্গী — যারা জান্নাতে থাকবে, শান্তিতে থাকবে, এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে।


আয়াত ০৪ : ৭০

    • এটাই আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ অনুগ্রহ। আর জ্ঞানের দিক দিয়ে আল্লাহই যথেষ্ট।

এই যে নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সৎকর্মশীলদের সঙ্গ লাভের সুযোগ—এটা মানুষের নিজের কৃতিত্ব নয়, বরং একমাত্র আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ। যে এই সম্মানিত অবস্থানে পৌঁছায়, সে তা পায় আল্লাহর রহমত ও করুণার কারণে।

আল্লাহ সমস্ত কিছুর জ্ঞান রাখেন — কে প্রকৃত আনুগত্য করেছে, কে কী আমল করেছে, তা তাঁর কাছে লুকোনো নেই। সুতরাং তিনিই যথাযথ বিচার করবেন।


আয়াত ০৪ : ৭১

  • হে মুমিনগণ!
    • তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করো এবং দলে দলে বের হও,
    • অথবা একযোগে বের হও।

প্রেক্ষাপট: এই আয়াতটি নাযিল হয় মদীনায়, এক সময় যখন মুসলমানদেরকে বারবার কাফিরদের আক্রমণের আশঙ্কায় থাকতে হতো। মদিনায় হিজরতের পর মুশরিক মক্কাবাসীরা এবং আশপাশের অন্যান্য শত্রু গোষ্ঠীগুলো মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করত এবং আক্রমণের পরিকল্পনা করত। এরই প্রেক্ষিতে মুসলমানদেরকে সতর্ক থাকা, সামরিক কৌশল রপ্ত করা, এবং দায়িত্বের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

  • এই আয়াতটি উহুদ যুদ্ধের পরবর্তী সময় বা হামরাউল আসাদ অভিযান- এর প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়েছে বলে অনেক মুফাসসির মত দিয়েছেন (যেমন: ইবনে কাসীর, তাবারী)।
  • উহুদের যুদ্ধ-এ মুসলমানদের একটি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল, যার ফলে পরবর্তী সময়ে তাদের মাঝে এক ধরনের দুর্বলতা ও ভয় ঢুকে পড়েছিল।
  • তখনই আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করে মুসলমানদেরকে সতর্কতা অবলম্বন, দলগত শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সমন্বিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দেন।

এই আয়াতে আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি নির্দেশ দিচ্ছেন যেন তারা তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে সচেতন ও প্রস্তুত থাকে। তাদেরকে বলা হচ্ছে —

  • "সতর্কতা অবলম্বন করো" — অর্থাৎ আত্মরক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নাও। যুদ্ধের সময় বা বিপদের মুহূর্তে অযথা গাফিল থাকা উচিত নয়।
  • "দলে দলে বের হও" বা "একযোগে বের হও" — প্রয়োজন অনুযায়ী কখনো ছোট ছোট দল করে যুদ্ধক্ষেত্রে যাও বা প্রয়োজনে সব মুসলিম একসঙ্গে রওনা হও। কৌশলগতভাবে যে পন্থা উপযুক্ত, তাই গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
  • এটি ছিল এক ধরনের সামরিক নির্দেশনা, যা মুসলিমদের দায়িত্বশীলতা, সতর্কতা ও ঐক্যের গুরুত্ব বোঝায়।

আয়াত ০৪ : ৭২

  • আর নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যেও
    • কেউ কেউ আছে যারা পিছনে থাকবেই ।
    • অতঃপর যদি তোমাদের উপর কোনো বিপদ আসে,
    • সে বলবে, “আল্লাহ আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, আমি তো তাদের সঙ্গে ছিলাম না। ”

প্রেক্ষাপট: এটি হামরাউল আসাদ অভিযানের প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়, যেখানে কিছু লোক নবী (সা.)-এর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বাহিনী থেকে পিছিয়ে পড়ে।

এই আয়াতে মুনাফিকদের (কপট ঈমানদারদের) আচরণ তুলে ধরা হয়েছে:

  • তারা যুদ্ধ বা কষ্টকর কাজে অংশ নিতে চায় না। ইচ্ছাকৃতভাবে পিছিয়ে থাকে — যেমন অলসতা, অজুহাত, বা ভীতুর মতো আচরণ করে।
  • যদি মুসলমানদের মধ্যে কেউ শহীদ হয় বা ক্ষতির মুখে পড়ে, তখন তারা খুশি হয় এবং বলে: “ভালো হয়েছে আমি যাইনি! আল্লাহ আমার উপর দয়া করেছেন।” অর্থাৎ, তারা মূলত যুদ্ধ এড়িয়ে নিরাপদে থাকতে পছন্দ করে, এবং বিপদের সময় তা নিয়ে গর্বও করে!

আয়াত ০৪ : ৭৩

    • আর যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো অনুগ্রহ আসে,
    • সে তখন এমনভাবে বলবে — যেন তোমাদের ও তার মধ্যে কোনো বন্ধুত্বই ছিল না —
    • “হায়, আমি যদি তাদের সঙ্গে থাকতাম, তাহলে তো বিরাট সাফল্য পেয়ে যেতাম!”

এই আয়াতে মুনাফিকদের দ্বিমুখী চরিত্র আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

  • তারা যুদ্ধ বা দ্বীনের কোনো কষ্টকর কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে।
  • কিন্তু যখন দেখে, মুসলিমরা জিতেছে, গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) পেয়েছে, সম্মান বা সফলতা অর্জন করেছে — তখন আফসোস করে বলে: "ইশ! আমিও যদি তাদের সঙ্গে যেতাম, তাহলে আমিও এত বড় সাফল্য পেতাম!"
  • এই সময় তারা এমনভাবে কথা বলে, যেন কখনো মুসলিমদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বা বিমুখতা ছিলই না ।

আয়াত ০৪ : ৭৪

    • সুতরাং যারা দুনিয়ার জীবন বিক্রি করে আখিরাতকে গ্রহণ করেছে,
    • তারা যেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে।
    • আর যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে—সে নিহত হোক কিংবা বিজয়ী হোক—
    • তাকে তো আমরা অবশ্যই মহাপুরস্কার প্রদান করব।

এই আয়াতে আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করার যোগ্য প্রকৃত ঈমানদারদের কথা বলা হয়েছে—

  • "যারা দুনিয়ার বদলে আখিরাতকে বেছে নেয়"
    • তারা আরাম বা সম্পদের পেছনে নয়, চিরস্থায়ী পুরস্কারের জন্য কাজ করে।
    • তাদের ইচ্ছা — আল্লাহর সন্তুষ্টি, আখিরাতের নাজাত।
  • আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করলে—
    • সে যদি শহীদ হয় → আল্লাহর কাছে শহীদের উচ্চ মর্যাদা ও জান্নাতের প্রতিশ্রুতি।
    • সে যদি জিতে যায় → দুনিয়া ও আখিরাতে পুরস্কৃত হবে।
  • এখানে বলা হচ্ছে: যুদ্ধের ফলাফল নয়, নিয়ত ও পথটাই গুরুত্বপূর্ণ। মৃত্যু বা বিজয় — দুটোই আল্লাহর কাছে পুরস্কারযোগ্য, যদি তা হয় "ফি সাবিলিল্লাহ" — অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর জন্য।

আয়াত ০৪ : ৭৫

    • তোমরা কেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে না —
    • অথচ দুর্বল, নির্যাতিত পুরুষ, নারী ও শিশু রয়েছে, যারা (আহ্বান করে) বলছে:
      • হে আমাদের পালনকর্তা! এই জালিম জনপদ থেকে আমাদের বের করে আনো।
      • আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একজন অভিভাবক দান করো,
    • এবং তোমার পক্ষ থেকেই একজন সাহায্যকারী দান করো।

প্রেক্ষাপট :
মক্কা নগরীতে এমন কিছু মুসলমান ছিলেন, যারা শারীরিকভাবে দুর্বল এবং আর্থিকভাবে অক্ষম হওয়ায় হিজরত করতে পারছিলেন না। কাফেররাও তাদের হিজরত করতে বাধা দিত এবং নানা ভাবে নির্যাতন করত, যেন তারা ইসলাম ছেড়ে দেয়। কিন্তু এরা ছিলেন ঈমানদার ও ধৈর্যশীল — তারা সব অত্যাচার সহ্য করেও ইসলাম থেকে সরেননি। তাদের মধ্যে ছিলেন:

  • আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) ও তাঁর মা,
  • সালামা ইবন হিশাম,
  • ওলীদ ইবন ওলীদ,
  • আবু জান্দাল ইবন সাহল (রা.), প্রমুখ।
    তাঁরা ইসলামের ওপর অটল থাকেন, কিন্তু কাফেরদের কঠিন উৎপীড়ন সহ্য করতে হয়। তাঁরা দিনরাত আল্লাহর কাছে দো‘আ করতেন মুক্তির জন্য :
    • “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এই জালিম নগরী থেকে মুক্তি দাও, আর আমাদের জন্য এমন একজন অভিভাবক ও সাহায্যকারী নিযুক্ত করো, যিনি আমাদেরকে রক্ষা করবেন।”

আল্লাহ তাদের দো‘আ কবুল করলেন দুটি ধাপে:

  • কিছু সাহাবীকে হিজরতের সুযোগ করে দিলেন — এভাবে তাদের প্রথম দো‘আ পূর্ণ হলো।
  • যারা মক্কায় রয়ে গেলেন, তাদের জন্য পরবর্তীতে মুসলিম বাহিনীর মাধ্যমে মুক্তির ব্যবস্থা করলেন। মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ ﷺ আত্তাব ইবন উসাইদ (রা.)-কে মক্কার শাসক নিযুক্ত করেন এবং অত্যাচারিত মুসলিমরা কাফেরদের হাত থেকে মুক্তি পান — তাদের দ্বিতীয় দো‘আও কবুল হয়।

আয়াত ০৪ : ৭৬

    • যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে।
    • আর যারা কুফরি করে, তারা তাগূতের (অবৈধ শক্তি, শয়তানি সত্তা) পথে যুদ্ধ করে।
    • কাজেই শয়তানের সহযোগীদের বিরুদ্ধে লড়ো এবং নিশ্চিত জেনে রাখো, শয়তানের কৌশল আসলে নিতান্তই দুর্বল।

আল্লাহ এই আয়াতে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, বিশ্বে দুটি পক্ষ রয়েছে—একটি আল্লাহর পক্ষ, অন্যটি শয়তানের পক্ষ।

  • ঈমানদারদের পক্ষ:
    • যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে।
    • তারা সত্য, ন্যায়, অধিকার এবং নিপীড়িতদের মুক্তির জন্য লড়াই করে।
    • তাদের লক্ষ্য শুধু বিজয় নয়, বরং আল্লাহর পথে আত্মত্যাগ ও আনুগত্য।
  • কুফরীদের পক্ষ:
    • যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, তারা তাগূতের (অন্যায় ও শয়তানি শক্তির) পক্ষে যুদ্ধ করে।
    • তারা মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, সত্যের পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং অন্যায় শক্তিকে টিকিয়ে রাখতে চায়।
  • শয়তানের কৌশল আসলে নিতান্তই দুর্বল।
    • বাহ্যিকভাবে যত শক্তিশালী মনে হোক না কেন, শয়তান ও তার সহযোগীদের চক্রান্ত আল্লাহর ঈমানদার বান্দাদের সামনে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারে না।

🌟 সূরা আন-নিসা (সূরা ৪) — আয়াতভিত্তিক বিভাগ ও বিষয়বস্তু (বাংলা) 🔹 আয়াত 1–10: নারীর মর্যাদা, আত্মীয়তা ও এতিমদের অধিকার শিরোনাম: নারীর সম্মান ও এতিমদের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ

নারীদের প্রতি দায়িত্বশীলতা

আত্মীয়তার গুরুত্ব

এতিমদের সম্পদ রক্ষা ও ন্যায্য বণ্টনের নির্দেশ

🔹 আয়াত 11–14: উত্তরাধিকার (Inheritance) বিধান শিরোনাম: শরীয়তের উত্তরাধিকার আইন

সন্তান, পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট অংশ

যারা আল্লাহর বিধান মানে না, তাদের জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি

🔹 আয়াত 15–18: জিনা ও তওবার বিধান শিরোনাম: ব্যভিচারের শাস্তি ও খাঁটি তওবার গুরুত্ব

জিনার শাস্তি

মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়ার আগেই তওবার আহ্বান

🔹 আয়াত 19–28: নারীদের অধিকার, বিবাহ ও পারিবারিক ন্যায়বিচার শিরোনাম: নারীর সম্মান, বিবাহের শর্তাবলি ও পারিবারিক সততা

জোর করে স্ত্রীদের দমন নিষেধ

নারীর প্রতি সদ্ব্যবহার

যৌতুক, মোহর, বিবাহযোগ্য নারী ও নিষিদ্ধ সম্পর্ক

🔹 আয়াত 29–42: সামাজিক ন্যায়বিচার ও দুনিয়া-আখিরাতের হিসাব শিরোনাম: সম্পদে ন্যায়, আত্মহত্যা নিষেধ, কিয়ামতের সাক্ষ্য

অন্যায়ভাবে সম্পদ ভক্ষণ হারাম

আত্মহত্যার কঠোর নিষেধ

কাফিরদের অবস্থা ও সাক্ষ্য দিবসের বর্ণনা

🔹 আয়াত 43–57: নামাজের পূর্বে পবিত্রতা ও আহলে কিতাবের বিভ্রান্তি শিরোনাম: নামাজে পবিত্রতা ও আহলে কিতাবের শিরক ও বিকৃতি

মাতাল অবস্থায় নামাজে নিষেধ

ওযু ও তায়াম্মুমের বিধান

ইহুদি-খ্রিস্টানদের কিতাব বিকৃতি ও ঈমান বিক্রির সমালোচনা

🔹 আয়াত 58–70: ন্যায়বিচার ও নবীর অনুসরণ শিরোনাম: আমানতের দায়িত্ব, ন্যায়বিচার ও রাসূলের আনুগত্য

নেতৃত্বে ন্যায্যতা

আল্লাহ ও রাসূলের আদেশ মানার অপরিহার্যতা

মুনাফিকদের চিহ্ন ও রাসূলের প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য

🔹 আয়াত 71–104: জিহাদ ও নিরাপত্তা বিধান শিরোনাম: যুদ্ধের সময় প্রস্তুতি, নামাজ, এবং আল্লাহর সাহায্য

শত্রু থেকে সতর্কতা

যুদ্ধকালীন নামাজের নিয়ম

কষ্টে ধৈর্য ও আল্লাহর সাহায্যের আশ্বাস

🔹 আয়াত 105–126: ইসলামী বিচারনীতি ও মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র শিরোনাম: ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও গোপন ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা

ফয়সালা কুরআনের আলোকে

মুনাফিকদের প্রতারণা ও গোপন ষড়যন্ত্র

🔹 আয়াত 127–134: নারীদের সংক্রান্ত জটিল প্রশ্নের উত্তর শিরোনাম: নারীর বিষয়ে বিধান ও আল্লাহর ন্যায্যতা

একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে ন্যায়

নিঃসন্তান উত্তরাধিকারীর ব্যাপারে কুরআনিক ব্যাখ্যা

🔹 আয়াত 135–152: ঈমান, ন্যায়বিচার ও ইহুদি-খ্রিস্টান সম্পর্ক শিরোনাম: পক্ষপাতহীন ন্যায়বিচার ও সঠিক বিশ্বাস

আল্লাহর পথে দাঁড়িয়ে ন্যায়ের সাক্ষ্য দেওয়া

মুনাফিক ও আহলে কিতাবের ঈমান বিকৃতি

🔹 আয়াত 153–175: আহলে কিতাবদের বিতর্ক ও ঈসা (আ.) সম্পর্কে ব্যাখ্যা শিরোনাম: আহলে কিতাবের দাবি ও হযরত ঈসা (আ.) এর প্রকৃত মর্যাদা

আহলে কিতাবের দাবি ও কিতাব বিকৃতি

ঈসা (আ.) কেবল আল্লাহর রাসূল — কোনোভাবেই ঈশ্বর নন

🔹 আয়াত 176: উত্তরাধিকার বিষয়ে বিশেষ রায় শিরোনাম: নিঃসন্তান উত্তরাধিকারের সুনির্দিষ্ট বিধান

কালালাহ (যার সন্তান নেই) – তার সম্পদের বণ্টন বিষয়ে নির্দিষ্ট আদেশ

✅ সারসংক্ষেপ শিরোনাম: “নারী, ন্যায়বিচার ও সমাজের ভারসাম্য রক্ষায় ইসলামী দিকনির্দেশনা” অথবা “সূরা আন-নিসা: নারীর অধিকার, সামাজিক ন্যায় ও বিশ্বাসের শুদ্ধতা”


🌟 Surah An-Nisa (Surah 4) — Thematic Breakdown by Verse Range 🔹 Verses 1–10: The Dignity of Women, Family Ties & Orphan Rights Title: Honor for Women and Protection of Orphan Property

Respect and responsibility toward women

Importance of kinship ties

Clear instructions to protect the property and rights of orphans

🔹 Verses 11–14: Islamic Inheritance Laws Title: Divinely Prescribed Inheritance System

Fixed shares for children, parents, spouses

Warning for those who disobey Allah’s commands in inheritance

🔹 Verses 15–18: Punishment for Adultery and Sincere Repentance Title: Adultery and the Urgency of True Repentance

Punishment for unlawful sexual relations

Sincere repentance must come before death approaches

🔹 Verses 19–28: Women’s Rights, Marriage Ethics & Family Justice Title: Respect for Women, Conditions of Marriage, and Marital Integrity

No oppression in marriage

Kind treatment of wives

Rules for dowry, lawful and unlawful marriage ties

🔹 Verses 29–42: Social Justice & the Day of Reckoning Title: Economic Justice and Accountability in the Hereafter

Unlawful consumption of wealth

Prohibition of suicide

Scenes from the Day of Judgment and disbelievers’ fate

🔹 Verses 43–57: Purity for Prayer & Corruption of the People of the Book Title: Purification Laws and Scriptural Distortion

Prohibition of praying while intoxicated

Wudu and tayammum instructions

Critique of Jews and Christians altering divine scripture

🔹 Verses 58–70: Justice, Trust, and Obedience to the Prophet Title: Trust, Fair Judgment & Loyalty to the Messenger

Fulfillment of entrusted duties

Obligation to rule by justice

Signs of hypocrisy and the need to follow the Prophet wholeheartedly

🔹 Verses 71–104: Warfare and Spiritual Discipline Title: Rules of War, Protection in Conflict, and Allah’s Support

Readiness against enemies

Shortened prayer during battle

Steadfastness and trust in Allah during hardship

🔹 Verses 105–126: Legal Judgment & Hypocritical Conspiracies Title: Upholding Justice and Dealing with Hidden Plots

Decisions based on divine revelation

Exposure of hypocrites and their deceptions

🔹 Verses 127–134: Clarification on Women’s Rights and Justice Title: Fair Treatment in Complex Family Cases

Justice in polygamy

Rulings on inheritance for those with no direct heirs

🔹 Verses 135–152: Faith, Justice & the People of the Book Title: Impartial Justice and the Purity of Belief

Stand firm for justice even against oneself or relatives

Clarifying hypocrisy and doctrinal corruption among Jews and Christians

🔹 Verses 153–175: Arguments of the People of the Book & Status of Isa (Jesus) Title: Refuting the Claims of Jews & Christians and Clarifying Jesus’ Role

Their demands, denials, and scripture corruption

Jesus (‘Isa) was a Messenger — not divine

🔹 Verse 176: Special Inheritance Ruling Title: Clarifying Inheritance in the Case of a Childless Person

Detailed ruling for Kalalah (one who has no parents or children)

✅ Surah Summary Title: “Guidance on Women’s Rights, Social Justice, and Purity of Faith” or “Surah An-Nisa: Upholding Family, Justice, and Divine Law”


Another Version

🔹 আয়াত ১–৩: নারী-পুরুষের সুরক্ষা ও পারিবারিক আইন শিরোনাম: নারীদের অধিকার ও বিবাহবিধি

আয়াত ১: বিবাহিত দম্পতির সন্তানদের জন্য উত্তরাধিকার নিশ্চিতকরণ

আয়াত ২–৩: পিতামাতার পরমত দিয়ে এতিমদের সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও যত্ন

সমাজে নারীর সম্মান ও পরিবারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিবাহ ও উত্তরাধিকার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

🔹 আয়াত ৪–৬: মহিলাদের জন্য যে উপহার (মেহর) নির্ধারণ ও সমাজের দিশা শিরোনাম: নারী উপহার ও নৈতিক শিক্ষা

মেয়েদের অধিকার উপহার ঘোষণা এবং তা দান করার নিয়ম

শরিয়ায় নিষিদ্ধ ও স্বল্পবিবাহের বিষয়ে সতর্কতা ও পথ নির্দেশ

আদর্শ পরিবার ও সম্পর্কের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

🔹 আয়াত ৭–৮: উত্তরাধিকার ও অনুপ্রেরণা শিরোনাম: ন্যায্য উত্তরাধিকার ও সৌহার্দ্য

নিজের ভাইবোনদের আপেক্ষিকভাবে উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা

সৎবাদিতা ও ভাইদের প্রতি সদাচরণ অনুপ্রাণিত করা

পরম অনুগ্রহের ভিত্তিতে বিবাদ মীমাংসা ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

🔹 আয়াত ৯–১১: আরও বিস্তারিত উত্তরাধিকার আইন শিরোনাম: নির্দিষ্ট উত্তরাধিকার ভাগ

ইতিমধ্যেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে—মাত্রা ও পদ্ধতি দিয়ে উত্তরাধিকার বণ্টন

দয়া ও ন্যায়পরায়ণতার মৌলিক নির্দেশনা

মৃত্যু ও বিভক্তিতে পরিবারে শান্তি ও স্থিতি রক্ষা করার বিষয় উপস্থাপন।

🔹 আয়াত ১২–১৭: উত্তরাধিকার ও উত্তরাধিকারীদের জন্য ন্যায় নিশ্চিতকরণ শিরোনাম: শরীয়াহ অনুকূলে উত্তরাধিকার রুল

পুত্র, কন্যা, বাবা-মা, ভাইবোনদের ভাগ নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

বাধ্য বিনা বিধিনিষেধের অভ্যন্তরীণ সংহতি দরকার

যিনি স্ত্রী কিংবা নিজের সম্মানহানি চান, তিনি সিদ্ধান্ত নিন এবং আল্লাহকে স্মরণ করুন—তাঁর পক্ষেই সিদ্ধান্ত সর্বোত্তম।

🔹 আয়াত ১৮–২৩: সম্পদ থেকে উপহার ও খাওয়ানোর শৃঙ্খলিত বিধান শিরোনাম: ডিনারের আমন্ত্রণ ও শিষ্টাচরণ

বন্ধু, আত্মীয়, দরিদ্র ও পথচারীদের আমন্ত্রণ ও বিশিষ্ট হস্তক্ষেপ

ব্যবহারিক দয়া ও সামাজিক বন্ধুত্ব গড়ার উপায় নির্ধারণ করেন

পরিচয়ের সীমা, শরীয়াহ বিধিনিষেধ মেনে শিষ্ট ও সম্মানজনক আচরণ শিক্ষা দেয়।

🔹 আয়াত ২৪–৪০: বিবাহবিচ্ছেদ ও দেহসম্পর্কীয় বিধি শিরোনাম: বিবাহ, তালাক, ও দেহসম্পর্কীয় বিধিনিষেধ

নিষিদ্ধ স্ত্রীদের তালিকা: মাতামহী, নিজের স্ত্রীর স্বজন (বায়বাজি), স্ত্রীর ছোট বোন ইত্যাদি

মেহর, পরকালের বিধি, বেয়াত বিরতির নিয়ম

এহকাম ও দেহসম্পর্কে সম্মতি, নবুওাথে বিশ্বাস

কয়েকটি চিত্র দিয়ে বাস্তবতাকে পরিষ্কার করা হয়েছে, যেমন “তাকে বিছানা থেকে নামিয়েছে যারা — তারা অবగতি দেখেছে” — মানে যৌন অপরাধের মর্ম নিয়ে সতর্ক করেছেন।

🔹 আয়াত ৪১–৭৭: আইন ও বিচারবিধি শিরোনাম: বিচার, গৃহহত্যা ও সামাজিক নিরাপত্তা

ওযিফা ও জামিন: আপোষ না হলে ২ সাক্ষীর স্বাক্ষ্য ও জামিনের কথা বলা হয়েছে (৪:১৫–১৬)

ফরজ হাইক্যুম্যানিক: যখন ইস্তাহার (তালাক) হয়ে যায় — আইন অনুসারে ৩ মাস সিথানীকাল রাখা প্রয়োজন

ধরে রাখা ও নির্যাতনের শাস্তি ও নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র

গর্ভপাত, মত্ত্যুক্ষেত্র, ও বাগদত্তার ব্যাপারে নিসপত্তি ও ব্যবস্থা রেখেছেন

মোবিতা ও নির্যাতন বিরোধী বিধান যেমন: "যারা মুমিনদের থেকে তাদের জনশত্রু বানায় — তাদের শাস্তি কঠিন" (৪:৮৫–৮৯)

🔹 আয়াত ৭৮–৮৮: গোপন ও প্রকাশ্য পাপের বিচার ও মুমিনদের সতর্কতা শিরোনাম: ঈমানহীনতার এবং মুমিনদের জন্য সতর্কতা

গোপন পাপ ও অপরাধ যেমন মূর্খতা, মিথ্যাচার, পরকীয়া সম্পর্কে উদ্বেগ

মুমিনদের প্রতিযোগিতা — “তোমরা প্রথমে ভাল কাজে এগিয়ে যাও,” অন্যদের প্ররোচনা করার কথা বলা হয়েছে।

🔹 আয়াত ৮৯–৮৯: লেখাপড়ার অংশ শিরোনাম: কুরআনের সংযোজন থেকে নিরাশা

“তোমরা যদি অন্তরের মধ্যে ভালো ধারণা নিয়ে আয়, আমি কুরআনে তোমাদের সেই আচরণ সমর্থন করবো।”

অর্থাৎ, যারা সত্যের অনুসন্ধান করে, তাদেরকে আল্লাহর নির্দেশনায় নেয়া হবে।

🔹 আয়াত ৯০–১২৭: ইতিহাস ও পাঠ শিরোনাম: পূর্ববর্তী প্রজন্ম ও ইসলামের শিক্ষা

ইসা, ইবেছিলেন, ঈশাক, ইয়াকুব ও উম্মদের কাহিনী

ইস্রাইলির দলিলে দাওয়াত, প্রতিকার ও হিউমিলিয়েশন

তেলাফাজির ভিত্তি — শত্রুরা বাজে পথ থেকে ফিরেছে, আল্লাহসহ মুমিনদের গঠনে আবার প্রতিষ্ঠা করেছে।

🔹 আয়াত ১২৮–১৩৪: প্রিয় ও বিভক্ত সম্পর্ক শিরোনাম: স্বপ্ন ও দাম্পত্য জীবন

“তুমি আউলীর জন্য দোয়া কর, যদিও তোমার নিজের ভাই-বোন তোমার জন্য অভিসীন।”

পরিবার ও বিবাহবিচ্ছেদের কথা — ইসলামিক নীতিমালা নিয়ে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা।

🔹 আয়াত ১৩৫–১৭৬: দিনাঢ্য নির্দেশ ও নির্দিষ্ট আইন শিরোনাম: তোয়ারাহ, ইনজিল, কুরআনিক আইন

তাওরাহ, ইঞ্জিল, কুরআন — তিনবিধ আইন ও ধর্মীয় নীতি নিয়ে আলোচনা

“ তাদের যদি আদেশে উদ্বেগ বা প্রতারণা না থাকে, তবে আপনি (মো) ন্যায়বিচার করো।”

“সাবর্ক, অন্ন, পাওয়ার জন্য অনেকের কথা আসে — কিন্তু ভালো কাজ যারা করে, তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।”


Surah An-Nisa (The Women)

🕊️ Verses 1–23: Rights, Family Structure, and Marital Laws

🔹 Verses 1–3: Creation, Kinship, and Justice Toward Orphans Theme: Foundation of family and justice

Verse 1: All humans are created from a single soul (Adam), emphasizing the unity and equality of mankind.

Verse 2: Strict command to safeguard the wealth of orphans and not to consume it unjustly.

Verse 3: Encouragement of justice in marriage—permitting up to four wives only if a man can treat them all fairly; otherwise, only one.

🔑 Key value: Justice in family life and protection of the vulnerable.

🔹 Verses 4–6: Women's Rights and Orphan Maturity Theme: Protection and dignity for women

Women are entitled to receive their dowry (mahr) as a gift and not to be coerced into giving it up.

When orphans reach maturity and are capable, their wealth should be handed over responsibly.

🔑 Key value: Economic dignity and fair treatment of women and orphans.

🔹 Verses 7–10: Inheritance Rights and Warnings Theme: Equitable inheritance distribution

Both men and women have a share in what parents and relatives leave behind—a revolutionary concept in pre-Islamic Arabia.

A warning is given to those who consume orphan property unjustly—they are consuming fire into their bellies.

🔑 Key value: Justice and fair distribution of wealth within families.

🔹 Verses 11–14: Detailed Inheritance Shares Theme: Fixed portions for heirs

Explicitly outlines the shares for sons, daughters, parents, spouses, and siblings.

These rulings are from Allah Himself, and obeying them leads to Paradise, while disobedience invites Hell.

🔑 Key value: Divine system of wealth transfer and social balance.

🔹 Verses 15–16: Adultery and Community Accountability Theme: Morality and social responsibility

Early disciplinary steps regarding sexual misconduct are outlined, to be refined later in Islamic law.

Community plays a role in safeguarding moral values and offering repentance opportunities.

🔑 Key value: Moral integrity and justice without cruelty.

🔹 Verses 17–18: Conditions for True Repentance Theme: Sincere return to Allah

Repentance is accepted for those who sin in ignorance and turn back before death approaches.

Insincere or last-moment repentance is not valid.

🔑 Key value: Sincerity and urgency in correcting oneself.

🔹 Verses 19–21: Marital Ethics and Mutual Respect Theme: Spousal respect and consent

Forbids inheriting women against their will (a pre-Islamic practice).

Commands men to live honorably with their wives, even when love fades.

Divorce is allowed but should be done justly, not vindictively.

🔑 Key value: Women's autonomy and kindness in relationships.

🔹 Verses 22–23: Prohibited Degrees of Marriage Theme: Preserving family sanctity

Lists women whom men are forbidden to marry (mother, sister, daughter, aunt, stepdaughter, etc.).

Establishes boundaries for lawful relationships and protects sacred familial bonds.

🔑 Key value: Clarity in lawful relations and family integrity.

🔹 Verses 24–40: Marriage Rules, Forbidden Relations & Ethical Wealth Handling Theme: Marital regulations, dower (mahr), and economic ethics

Lists women forbidden for marriage and allows conditional temporary marriage (mut‘ah, with scholarly differences).

Emphasizes giving women their rightful dowries and treating them fairly.

Strong warnings against consuming orphan’s wealth unjustly.

Encourages justice, charity, and caring for the needy without arrogance.

Condemns greed, hoarding, and hypocritical religious behavior.

🔹 Verses 41–57: Judgement, Disobedience of Past Nations, and Hypocrisy Theme: Accountability and historical lessons

Warns about the Day of Judgment and the consequences for hypocrites.

Reminds of earlier communities (like Bani Israel) who disobeyed prophets.

Condemns those who twist words from divine scriptures and mock revelation.

🔹 Verses 58–70: Justice, Obedience, and Loyalty to Prophet Theme: Governance and obedience to leadership

Command to judge with justice and return trusts to their owners.

Urges believers to obey Allah, His Messenger, and those in authority.

Defines loyalty: following the Prophet ﷺ sincerely, not just in words.

Those who obey Allah and the Prophet will be with the righteous in Paradise.

🔹 Verses 71–104: Laws of Jihad, Safety, and Prayer During Fear Theme: Warfare, security, and prayer

Instructions on preparation for battle, courage, and strategic defense.

Prayer is not waived even during fear (Salat al-Khawf is described).

Prohibits fleeing from battle and abandoning the weak.

🔹 Verses 105–126: Judicial Rules and Honesty in Testimony Theme: Legal ethics and truthfulness

Directs the Prophet to judge disputes fairly, based on revelation.

Strongly warns against siding with the dishonest or concealing the truth.

Emphasizes the importance of standing up for justice—even against oneself or family.

🔹 Verses 127–134: Women’s Rights and Polygamy Guidance Theme: Equity in marriage and family rights

Responds to questions about the rights of orphan girls and women.

Stresses the importance of fairness in polygamous marriages.

Encourages kindness and forbids oppression in marital relationships.

🔹 Verses 135–152: Faith, Hypocrisy, and True Belief Theme: Sincerity of faith and unity of belief

Urges believers to be upright in justice, even if it’s against themselves.

Condemns hypocrisy and belief in part of the scripture while rejecting the rest.

Clarifies that true belief involves full submission to Allah and His Messenger.

🔹 Verses 153–176: The People of the Book, Inheritance Laws, and Final Legal Clarifications Theme: Interfaith integrity and detailed legal rulings

Mentions violations by Jews and Christians regarding their scriptures.

Warns against false accusations and misinterpretation of divine law.

Concludes with detailed inheritance laws, including the famous last verse (176) that explains the shares of siblings when parents or children are not present.