005 | Al-Ma'ida (আল-মায়েদা)
| আমরা সবসময় মনে রাখি | We Always Remember |
-
যখন একজন মানুষ মারা যায়, তার সব কাজ শেষ হয়ে যায় , তিনটি ব্যতিক্রম ছাড়া: সদকা জারিয়া (চলমান দান) , এমন জ্ঞান যা থেকে উপকার পাওয়া যায়, এবং একটি সৎ সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে । | মুহাম্মদ (সাঃ) ; হাদিস - সহিহ মুসলিম | When a person dies, his works end, except for three: ongoing charity, knowledge that is benefited from, and a righteous child who prays for him. | Prophet Mohammed (PBUH); Hadith - Sahih Muslim |
-
যে ব্যক্তি ভাল কাজের জন্য সুপারিশ করবে, তার জন্য তাতে (সাওয়াবের) অংশ আছে এবং যে মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে, তার জন্য তাতে অংশ আছে । আর আল্লাহ সব কিছুর উপর নজর রাখেন । | সূরাঃ ৪ , আন-নিসা , আয়াতঃ : ৮৫ | Whoever intercedes for a good cause will have a reward therefrom; and whoever intercedes for an evil cause will have a burden therefrom. And ever is Allah, over all things, a Keeper. | Surah 4 , An-Nisa , Verse: 85 |
Total Verses : 120 ; Revealed in Madinah
এই সূরার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু:
- হজ এবং চুক্তি পূরণ : আয়াত ১–২
- হালাল ও হারাম খাদ্যের বিধান : আয়াত ৩–৫
- দীনের পূর্ণতার ঘোষণা (ইসলামের পরিপূর্ণতা) : আয়াত ৩
- ওযু , ফরজ গোসল, তায়াম্মুম : আয়াত 6
Important Areas Covered in This Surah:
- Hajj and fulfillment of contracts : Verses 1–2
- Guidelines on halal and haram food : Verses 3–5
- Completion of the religion (Islam) : Verse 3
In the name of Allah, the Most Gracious, the Most Merciful
আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময়, পরম দয়ালু
05 Verse: 1
- হে মুমিনগণ ! তোমরা চুক্তিসমূহ পূর্ণ করো । তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে , যা তোমাদের কাছে পাঠ করা হয়েছে তা ছাড়া — তবে যখন তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাক , তখন শিকার হালাল নয় । নিশ্চয়ই আল্লাহ যা ইচ্ছা , তাই বিধান করেন ।
"হে মুমিনগণ! তোমরা চুক্তিসমূহ পূর্ণ করো।"
- এখানে “চুক্তি” বলতে বোঝানো হয়েছে আল্ল াহর সঙ্গে মুসলমানদের ধর্মীয় অঙ্গীকার, যেমন: নামাজ, রোজা, হজ, যাকাতসহ সকল ইবাদত পালন করা এবং মানুষের সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। ইসলামে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা একটি বড় গুনাহ। তাই আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন—সত্যিকার মুমিনদের উচিত সব চুক্তি ও অঙ্গীকার পূর্ণভাবে রক্ষা করা।
“…তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে, যা তোমাদের কাছে পাঠ করা হয়েছে তা ছাড়া…”
- সাধারণভাবে গরু, ছাগল, ভেড়া, উট ইত্যাদি চতুষ্পদ জন্তু আল্লাহ হালাল করেছেন—এগুলো খাওয়া ও কোরবানি করা বৈধ। তবে যে সব পশু বিশেষভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে (যেমন: মূর্তির নামে উৎসর্গকৃত পশু ইত্যাদি), সেগুলো এখানে ব্যতিক্রম হিসেবে বোঝানো হয়েছে।
“…তবে যখন তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাক, তখন শিকার হালাল নয়।…”
- হজ বা উমরার সময় ইহরাম অবস্থায় থাকলে বন্য জন্তু শিকার করা হারাম। এটি হজের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার একটি নির্দেশনা।
“…নিশ্চয়ই আল্লাহ যা ইচ্ছা, তাই বিধান করেন ।”
- আল্লাহর হুকুম চূড়ান্ত। তিনি আমাদের কল্যাণের জন্য যা ঠিক মনে করেন, সেটাই নির্ধারণ করেন। তাঁর হুকুমে প্রশ্ন তোলা যাবে না, বরং তা মেনে চলাই মুমিনদের দায়িত্ব।
05 Verse: 2
- হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নির্ধারিত নিদর্শনসমূহকে অবমাননা করো না, পবিত্র মাসের মর্যাদা নষ্ট করো না, কুরবানির পশু এবং তাদের গলায় পরানো মালা (যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে নির্ধারিত)– এসবের অবমাননা করো না, এবং যারা তাদের রবের অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র গৃহ (কাবা) অভিমুখে যাচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা লঙ্ঘন করো না। আর যখন তোমরা ইহরাম থেকে মুক্ত হও, তখন শিকার করতে পারো। এবং যে সম্প্রদায় তোমাদেরকে মসজিদুল হারাম থেকে বাধা দিয়েছিল, তাদের প্রতি ঘৃণা যেন তোমাদেরকে সীমা লঙ্ঘনে প্ররোচি ত না করে। তোমরা ন্যায় ও পরহেযগারিতে একে অপরকে সহযোগিতা করো, কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অপরকে সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিতে কঠোর।
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নির্ধারিত নিদর্শনসমূহকে অবমাননা করো না,”
- এখানে আল্লাহর নিদর্শন বলতে হজের নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন, কুরবানির পশু, পবিত্র স্থান (কাবা), ইহরাম, পবিত্র মাস ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। এসবকে সম্মানের চোখে দেখা এবং অবমাননা না করাই ঈমানের পরিচয়।
“পবিত্র মাসের মর্যাদা নষ্ট করো না,”
- ইসলামে চারটি মাস (মুহাররম, রজব, জিলকদ, জিলহজ্জ) পবিত্র মাস হিসেবে গণ্য। এই সময়ে যুদ্ধ, দাঙ্গা, সহিংসতা ইত্যাদির ওপর বিশেষ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই মাসগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করাও ইসলামের শিক্ষা।
“কুরবানির পশু এবং তাদের গলায় পরানো মালা (যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে নির্ধারিত)– এসবের অবমাননা করো না,”
- হজ বা কুরবানির জন্য নির্দিষ্ট পশু যারা নিয়ে আসা হয় এবং যাদের গলায় আলাদা চিহ্ন বা মালা পরানো হয়, তাদের সম্মান করতে হবে। কারণ, এগুলো আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করা হচ্ছে।
“যারা তাদের রবের অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র গৃহ (কাবা) অভিমুখে যাচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা লঙ্ঘন করো না,”
- হজযাত্রীরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কাবার দিকে যাচ্ছে। তাদের যেন কেউ কষ্ট না দেয়, পথ রুদ্ধ না করে, বা আক্রমণ না করে।
“আর যখন তোমরা ইহরাম থেকে মুক্ত হও, তখন শিকার করতে পারো।”
- ইহরাম অবস্থায় শিকার নিষিদ্ধ। কিন্তু ইহরাম শেষ হওয়ার পর শিকার করা বৈধ হয়ে যায়।
“যে সম্প্রদায় তোমাদেরকে মসজিদুল হারাম থেকে বাধা দিয়েছিল, তাদের প্রতি ঘৃণা যেন তোমাদেরকে সীমা লঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে,”
- পূর্বে মুশরিকরা মুসলিমদের কাবা শরীফে যেতে বাধা দিয়েছিল। তবুও মুসলিমরা যেন প্রতিশোধের নামে তাদের ওপর সীমা লঙ্ঘন না করে। ইসলাম প্রতিশোধ নয়, ন্যায়বিচার ও সংযম শেখায়।
“তোমরা ন্যায় ও পরহেযগারিতে একে অপরকে সহযোগিতা করো, কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অপরকে সহযোগিতা করো না,”
- সমাজে ন্যায়ের কাজ ও আল্লাহভীতির ওপর সহযোগিতা করতে হবে। কিন্তু অন্যায়, অন্যের ক্ষতি, বা কোনো গুনাহর কাজে একে অপরকে সাহায্য করা হারাম।
“আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিতে কঠোর।”
- সবশেষে কঠোরভাবে সতর্ক করে বলা হয়েছে: আল্লাহর অবাধ্যতায় সীমা লঙ্ঘন করো না। আল্লাহ সবকিছু জানেন, এবং তাঁর শাস্তি অত্যন্ত কঠিন।
05 Verse: 3
- তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শুকরের মাংস, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গকৃত জবাইকৃত জন্তু, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া, আঘাতে মারা যাওয়া, উঁচু থেকে পড়ে মারা যাওয়া, শিংয়ের আঘাতে মারা যাওয়া, যেসব জন্তু হিংস্র জন্তু খেয়ে ফেলেছে (যদি না তোমরা জীবিত অবস্থায় জবাই করতে পারো), যেসব জন্তু মূর্তির সামনে জবাই করা হয়েছে এবং ভাগ্য নির্ধারণের জন্য তীর ছোঁড়া — এসবও হারাম। এগুলো পাপের কাজ। আজ কাফিররা তোমাদের দীন থেকে নিরাশ হয়ে পড়েছে, অতএব তাদেরকে ভয় করো না, আমাকে ভয় করো। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম । কিন্তু যে ব্যক্তি ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হয়ে (হারাম কিছু খায়), আর সে গোনাহ করার ইচ্ছা পোষণ করে না — নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
“তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে…”
- আল্লাহ কিছু খাবার ও কাজ হারাম করে দিয়েছেন, কারণ সেগুলো মানব শরীর ও আত্মার জন্য ক্ষতিকর, এবং এগুলো অজ্ঞতা ও শিরকের যুগের প্রথা ছিল। হারাম করা হয়েছে:
- মৃত জন্তু – যা স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে, জবাই করা হয়নি।
- রক্ত – রক্ত খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
- শুকরের মাংস – এটি অপবিত্র এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিকর, তাই সম্পূর্ণরূপে হারাম।
- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গকৃত জন্তু – যেমন মূর্তি, পীর, দেবতা ইত্যাদির নামে কাটা হয়েছে।
- শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া জন্তু – যাকে দম বন্ধ করে মারা হয়েছে।
- আঘাতে মারা যাওয়া – কোনো আঘাতে (যেমন লাঠি, পাথর) মারা গেছে।
- উঁচু থেকে পড়ে মারা যাওয়া – দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া।
- শিংয়ের আঘাতে মারা যাওয়া – যেমন অন্য পশুর সাথে লড়াইয়ে মারা গেছে।
- হিংস্র জন্তু খেয়ে ফে লেছে – যেমন বাঘ, সিংহে আক্রমণ করেছে। তবে যদি জীবিত অবস্থায় জবাই করতে পারো, তাহলে খাওয়া যাবে।
- মূর্তির সামনে জবাই করা জন্তু – শিরকি কর্মকাণ্ড।
- ভাগ্য নির্ধারণের জন্য তীর ছোঁড়া – যা জুয়া বা ভাগ্য গণনার মতো, এসব ইসলাম আগে থেকেই নিষিদ্ধ করেছে।
“এসব পাপের কাজ”
- উপরোক্ত সবকিছু আল্লাহর দৃষ্টিতে গুনাহ এবং অশুচি।
“আজ কাফিররা তোমাদের দীন থেকে নিরাশ হয়ে পড়েছে, অতএব তাদেরকে ভয় করো না, আমাকে ভয় করো।”
- ইসলামের বিধান এত সুন্দর ও সুসংহতভাবে এসেছে যে, কাফিররা আর আশা করে না মুসলিমরা তাদের পথে ফিরে যাবে ।
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম…”
- দীনের পূর্ণতা ঘোষণা : এই অংশে ইসলামকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। ইসলামের সব বিধান (আকিদা, ইবাদত, আচার-আচরণ, সামাজিক-আর্থিক নীতি) এখন পূর্ণতা লাভ করেছে।
“তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”
- ইসলাম এখন একটি চূড়ান্ত, নির্ভরযোগ্য জীবনব্যবস্থা — যা আল্লাহ নিজে তাঁর বান্দাদের জন্য বেছে নিয়েছেন।
“কিন্তু যে ব্যক্তি ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হয়ে খায়…”
- কেউ যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়ে, যেখানে না খেলে সে মারা যাবে, তখন সে পরিমাণে খেতে পারবে যা তাকে বাঁচিয়ে রাখে। তবে তার মনে পাপের ইচ্ছা বা আল্লাহর অবাধ্যতা না থাকলে — আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে দেবেন।
05 Verse: 4
- তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে (হে মুহাম্মদ!), তাদের জন্য কী হালাল করা হয়েছে। বলুন, “তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সব ভালো ও পবিত্র বস্তু এবং শিকারী পশুদের মধ্যে যেগুলিকে তোমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছ — যেমন আল্লাহ তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন — তাদের দ্বারা শ িকারকৃত পশু তোমরা খেতে পারো, যদি তারা তোমাদের জন্য ধরে আনে। কিন্তু এ সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো।” নিশ্চয়ই আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত।
“তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে (হে মুহাম্মদ!), তাদের জন্য কী হালাল করা হয়েছে?”
সাহাবিগণ রাসূল (সা)-কে জিজ্ঞাসা করতেন: “আমরা কী কী খেতে পারি? কোন খাবার হালাল?” এই প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ তাআলা স্বয়ং নির্দেশ দেন।
“বলুন, ‘তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সব ভালো ও পবিত্র বস্তু।’”
ইসলাম এমন সব খাবার হালাল করেছে যা পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর ও সম্মানজনক। যেসব খাবার স্বাভাবিক মানব প্রবৃত্তি অনুযায়ী ভালো মনে হয়, সেগুলো সাধারণত হালাল । অপবিত্র, ক্ষতিকর, বা জঘন্য কোনো কিছু হালাল নয়।
“এবং শিকারী পশুদের মধ্যে যেগুলিকে তোমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছ — যেমন আল্লাহ তোমাদের শিক্ষা দি য়েছেন — তাদের দ্বারা শিকারকৃত পশু তোমরা খেতে পারো, যদি তারা তোমাদের জন্য ধরে আনে।”
কুকুর, বাজপাখি ইত্যাদি যেসব পশু শিকার করতে পারে, যদি সেগুলোকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং তারা মালিকের নির্দেশে শিকার করে — তবে তাদের ধরে আনা পশু হালাল। শর্ত: শিকার করার সময় আল্লাহর নাম নিতে হবে।
“কিন্তু এ সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করো…”
অর্থাৎ, শিকার ছাড়ার বা জবাই করার সময় “বিসমিল্লাহ” বলা অপরিহার্য। আল্লাহর নাম ছাড়া শিকার করলে তা হারাম হয়ে যায়।
“এবং আল্লাহকে ভয় করো।”
ইসলাম শুধু বাহ্যিক নিয়ম মানার ধর্ম নয়; অন্তরের খোদাভীতিও থাকতে হবে। হালাল-হারামের সীমারেখায় চলতে সব সময় আল্লাহভীতি থাকা জরুরি।
“নিশ্চয়ই আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত।”
অর্থাৎ, কেউ যদি গাফিল হয়ে হারাম কিছু খায় বা আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করে, তবে আল্লাহ তার দ্রুত হিসাব নেবেন।
05 Verse: 5
- আজ তোমাদের জন্য সকল পবিত্র ও উত্তম জিনিস হালাল করা হয়েছে। এবং কিতাবপ্রাপ্ত (ইহুদি ও খ্রিস্টানদের) খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল, আর তোমাদের খাদ্যও তাদের জন্য হালাল । তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সেসব সচ্চরিত্র নারী, যারা মুমিন, এবং সেইসব সচ্চরিত্র নারী যারা তোমাদের পূর্বে কিতাবপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে। যদি তোমরা তাদের মোহর প্রদান করো বিবাহের উদ্দেশ্যে—ব্যভিচার না করে এবং গোপন সম্পর্ক স্থাপন না করে । আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে কুফরী মিশ্রিত করবে তার ‘আমল নিস্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখিরাতে সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ।
“আজ তোমাদের জন্য সকল পবিত্র ও উত্তম জিনিস হালাল করা হয়েছে।”
ইসলাম শুধু হালাল নয়, পবিত্র ও উত্তম জিনিস খাওয়ার নির্দেশ দেয় । এর মানে শুধু শরীয়তসম্মত নয়, বরং স্বাস্থ্যকর, নৈতিক ভাবে গ্রহণযোগ্য এবং পরিষ্কার খাবারই খেতে হবে।
“কিতাবপ্রাপ্তদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল, এবং তোমাদের খাদ্যও তাদের জন্য হালাল।”
- যারা পূর্বে আসমানী কিতাব পেয়েছে—যেমন ইহুদি ও খ্রিস্টান—তাদের জবাইকৃত পশু (যদি তা শিরক ছাড়া হয়) মুসলিমদের জন্য খাওয়া হালাল।
- মুসলিমদের খাবারও তাদের জন্য বৈধ, কারণ ইসলামী খাবার বিধান বিশুদ্ধ ও আল্লাহর নামে করা।
- তবে মনে রাখতে হবে: যদি কিতাবধারীরা শিরক বা অন্য দেবতার নামে পশু উৎসর্গ করে, তা হারাম।
“তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সেসব সচ্চরিত্র নারী, যারা মুমিন,”
- একজন মুসলিম পুরুষের জন্য হালাল, যদি সে একজন সচ্চরিত্র মুসলিম নারীকে বিবাহ করে।
“এবং সেইসব সচ্চরিত্র নারী যারা তোমাদের পূর্বে কিতাবপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে।”
- মুসলিম পুরুষদের জন্য ইহুদি বা খ্রিস্টান সচ্চরিত্র নারী বিবাহ করাও বৈধ, যদি সে প্রকৃত কিতাবী ধর্মে বিশ্বাসী হয় এবং ব্যভিচারিণী না হয়।
“যদি তোমরা তাদের মোহর প্রদান করো বিবাহের উদ্দেশ্যে—ব্যভিচার না করে এবং গোপন সম্পর্ক স্থাপন না করে।”
- বৈধ সম্পর্ক কেবল বিবাহের মাধ্যমে হওয়া উচিত। প্রেম, গোপন সম্পর্ক, বা ব্যভিচার—সবই হারাম এবং সমাজকে ধ্বংস করে।
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে কুফরী মিশ্রিত করবে, তার আমল নিস্ফল হয়ে যাবে।”
- কেউ যদি ঈমান আনলেও পরে কুফরি করে বসে (অথবা ঈমানের সাথে শিরক বা আল্লাহর অবাধ্যতা মিশিয়ে ফেলে), তাহলে তার সব ভালো কাজ বরবাদ হয়ে যাবে।
05 Verse: 1 - 5
- O you who have believed, fulfill [all] contracts. Lawful for you are the animals of grazing livestock except for that which is recited to you [in this Qur'an]—hunting not being permitted while you are in the state of Ihram. Indeed, Allah ordains what He wills. [In this verse, Allah commands the believers to honor and fulfill all agreements—whether with Him or with fellow humans. It then addresses dietary laws, making certain livestock lawful for consumption while prohibiting others as detailed in the Qur’an. It also reminds that hunting is forbidden during Ihram (the sacred state during pilgrimage). ]
- O you who have believed, do not violate the rites of Allah or [the sanctity of] the sacred month or [neglect the marking of] the sacrificial animals and garlanding [them] or [violate the safety of] those coming to the Sacred House seeking bounty from their Lord and [His] approval. But when you come out of ihram, then [you may] hunt. And do not let the hatred of a people for having obstructed you from al-Masjid al-Haram lead you to transgress. And cooperate in righteousness and piety, but do not cooperate in sin and aggression. And fear Allah; indeed, Allah is severe in penalty.
- Prohibited to you are dead animals, blood, the flesh of swine, and that which has been dedicated to other than Allah, and [those animals] killed by strangling or by a violent blow or by a head-long fall or by the goring of horns, and those from which a wild animal has eaten, except what you [are able to] slaughter [before its death], and those which are sacrificed on stone altars, and [prohibited is] that you seek decision through divining arrows. That is grave disobedience. This day those who disbelieve have despaired of [defeating] your religion; so fear them not, but fear Me. This day I have perfected for you your religion and completed My favor upon you and have approved for you Islam as religion. But whoever is forced by severe hunger with no inclination to sin - then indeed, Allah is Forgiving and Merciful.
- They ask you, [O Muhammad], what has been made lawful for them. Say, "Lawful for you are [all] good foods and [game caught by] what you have trained of hunting animals which you train as Allah has taught you. So eat of what they catch for you, and mention the name of Allah upon it, and fear Allah." Indeed, Allah is swift in account.
- This day [all] good foods have been made lawful, and the food of those who were given the Scripture is lawful for you and your food is lawful for them. And [lawful in marriage are] chaste women from among the believers and chaste women from among those who were given the Scripture before you, when you have given them their due compensation, desiring chastity, not unlawful sexual intercourse or taking [secret] lovers. And whoever denies the faith - his work has become worthless, and he, in the Hereafter, will be among the losers.
05 Verse: 6
- হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাসাহ কর এবং পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর । আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তাহলে বিশেষভাবে (গোসল করে) পবিত্র হও । যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা হতে আগমন করে, অথবা তোমরা স্ত্রী-সহবাস কর এবং পানি না পাও, তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর; তা দিয়ে ত োমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ কর । আল্লাহ তোমাদেরকে কোন প্রকার কষ্ট দিতে চান না, বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।
“হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাসাহ কর এবং পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর ।”
- নামাযের আগে শরীর ও পোশাক পবিত্র হওয়া জরুরি। এজন্য ওযু করতে হয়, যা আল্লাহর একটি বিধান। ওযুর ফরজ ৪টি:
- মুখ ধোওয়া :
- মুখমণ্ডল ধুতে হবে সম্পূর্ণভাবে।
- হাত ধোওয়া (কনুই পর্যন্ত)
- দুই হাত কনুইসহ ধুতে হবে।
- মাথায় মাসাহ করা
- ভেজা হাতে মাথার উপর মাসাহ (মোছা) করতে হবে।
- পা ধোওয়া (টাখনু পর্যন্ত)
- দুই পা গোড়ালি পর্যন্ত ধুতে হবে।
এই চারটি কাজ না করলে ওযু হয় না। এছাড়াও সুন্নাত ও মুস্তাহাব কাজ রয়েছে (যেমন কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া ইত্যাদি), যা ওযুকে সুন্দর করে তোলে।
"আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তাহলে বিশেষভাবে (গোসল করে) পবিত্র হও ।"
নির্দিষ্ট অবস্থায় সম্পূর্ণ শরীর ধোওয়া (গোসল) ফরজ হয়ে যায়। যেমন:
- স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের পর
- স্বপ্নদোষ বা বীর্যপাতের পর
- নারীদের হায়েয বা নিফাস শেষ হওয়ার পর
“যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা হতে আগমন করে, অথবা তোমরা স্ত্রী-সহবাস কর এবং পানি না পাও, তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর; তা দিয়ে তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ কর ।”
- তায়াম্মুম কীভাবে করতে হয়?
- পরিষ্কার ও পবিত্র মাটি বা মাটির জাতীয় কিছু (যেমন: মাটি, বালি, পাথর) স্পর্শ করে — প্রথমে মুখে মাসাহ করতে হবে,
- তারপর উভয় হাতে মাসাহ করতে হবে (কনুইসহ),
“আল্লাহ তোমাদেরকে কোন প্রকার কষ্ট দিতে চান না, বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর ।”
ইসলামের বিধান কষ্টদায়ক নয়। বরং আল্লাহ চান,
- তোমরা পবিত্র হও,
- সহজভাবে ইবাদত করো,
- তাঁর অনুগ্রহে শুকরিয়া আদায় করো।
05 Verse: 7
- তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর এবং সেই অঙ্গীকারকেও তোমরা স্মরণ কর , যার দ্বারা তিনি তোমাদেরকে আবদ্ধ করেছিলেন , যখন তোমরা বলেছিলে, ‘শ্রবণ করলাম ও মান্য করলাম।’ আর আল্লাহকে ভয় কর । নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরে যা আছে , সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত ।
“আর আল্লাহকে ভয় কর।”
- মনে রেখো, আল্লাহ সব কিছু জানেন — তাই বাহ্যিক আচরণের চেয়েও মনের ভিতরের নিয়ত ও মনোভাব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
“নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরে যা আছে, সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।”
- তুমি হয়তো মুখে বলো, “আমি ঈমান এনেছি”, কিন্তু আল্লাহ জানেন—তোমার অন্তরে সত্যিই ঈমান আছে কিনা, তুমি সত্যিই তাঁর নির্দেশ মানো কিনা।
05 Verse: 8
- হে ঈমানদারগণ! তোমরা দৃঢ়ভাবে আল্লাহর জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অবিচল থাকো এবং ন্যায়ের সাক্ষ্য দাও। কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে ন্যায়পরায়ণ হতে বিরত না করে। ন্যায়পরায়ণ হও—এটাই তাকওয়ার (আল্লাহভীতি) সবচেয়ে নিকটবর্তী। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমরা যা করো, সে সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবগত।
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা দৃঢ়ভাবে আল্লাহর জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অবিচল থাকো…”
একজন মুমিনের দায়িত্ব হলো ন্যায়বিচারের পক্ষে অবিচল থাকা—
- চাপে পড়ে অন্যায় না করা,
- নিজের স্বার্ থে সত্য গোপন না করা,
- যেকোনো পরিস্থিতিতেও সত্যকে সমর্থন করা।
“…এবং ন্যায়ের সাক্ষ্য দাও।”
যখন কোনো বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে বলা হয় (চোখে দেখা বা জানার ভিত্তিতে), তখন অবশ্যই সত্য কথা বলতে হবে। কখনো কারো প্রতি সহানুভূতি, ভয়, বা স্বজনপ্রীতি যেন সত্যের ওপর প্রভাব না ফেলে।
“কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে ন্যায়পরায়ণ হতে বিরত না করে।”
এটি আয়াতের সবচেয়ে গভীর বার্তা: এমনকি যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তোমার শত্রু হয়, তবুও তাদের সঙ্গে ন্যায় করা থেকে বিরত হওয়া যাবে না ।
“ন্যায়পরায়ণ হও—এটাই তাকওয়ার সবচেয়ে নিকটবর্তী।”
- ন্যায়পরায়ণতা, অর্থাৎ বিচার, আচরণ, সিদ্ধান্ত—সব জায়গায় সত্য ও ন্যায়ের অনুসরণই হলো তাকওয়ার সবচেয়ে বাস্তব রূপ।
- আল্লাহভীতি (তাকওয়া) মানে হলো: এমন জীবন যাপন করা, যেখানে সবকিছুতে আল্লাহকে স্মরণ করা হয়।
“আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমরা যা করো, সে সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবগত।”
অর্থাৎ, তুমি মানুষকে যাই দেখাও না কেন, আল্লাহ তোমার প্রতিটি কথা, কাজ ও নিয়ত জানেন। তাঁর কাছে কিছুই গোপন নয় । আল্লাহ সবকিছু জানেন ।
05 Verse: 9
- যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।
“যারা ঈমান এনেছে”
ঈমান আনা মানে :
- এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখা,
- তাঁর রাসূল, কিতাব, ফেরেশতা, কিয়ামতের দিন ও তাকদিরে বিশ্বাস রাখা। শুধু মুখে বললেই হবে না, অন্তর থেকেও ঈমান আনতে হবে।
“ও সৎকাজ করেছে”
ঈমানের প্রমাণ হয় সৎকর্ম দিয়ে । যেমন:
- নামায পড়া,
- সততা বজায় রাখা,
- মানুষকে সাহায্য করা,
- জুলুম না করা ইত্যাদি।
“আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন…”
এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি চিরন্তন প্রতিশ্রুতি। তিনি কখনো তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না।
“ক্ষমা ও মহাপুরস্কার”
অর্থাৎ:
- ক্ষমা :
- পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে,
- দুনিয়ার ভুলত্রুটি ঢেকে দেওয়া হবে,
- আখিরাতে লজ্জা থেকে রক্ষা করা হবে।
- মহাপুরস্কার :
- জান্নাত,
- আল্লাহর নৈকট্য,
- শান্তি,
- এমন নেয়ামত যা কখনো শেষ হবে না।
05 Verse: 10
- আর যারা কুফরি করে ও আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে, তারাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী ।
“যারা কুফরি করে…”
কুফরি মানে :
- ঈমান না আনা,
- আল্লাহ, রাসূল (সাঃ) কুরআন, আখিরাত ... বিষয়ে অবিশ্বাস করা।
- কখনো ইচ্ছাকৃত সত্য জানার পরও তা অস্বীকার করা।
- কুফরি শুধু মুখে অবিশ্বাস নয়, মন থেকে সত্য অস্বী কার করাও কুফরি ।
“…ও আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে…”
“নিদর্শন” বলতে বোঝানো হচ্ছে:
- কুরআনের আয়াত,
- নবীদের পাঠানো দিকনির্দেশনা,
- আল্লাহর সৃষ্টি জগতের নিদর্শনসমূহ (যা তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়)। এগুলোর কোনো একটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করাও কুফরি।
“তারাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী।”
“নিদর্শন” বলতে বোঝানো হচ্ছে:
- অর্থাৎ, যারা ইচ্ছা করে সত্য অস্বীকার করে, আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা বলে, তাদের স্থায়ী আবাস হবে জাহান্নাম।
- “অধিবাসী” শব্দটি দ্বারা বোঝানো হয় — তারা চিরকাল সেখানেই থাকবে।
05 Verse: 6 - 10
- O you who have believed, when you rise to [perform] prayer, wash your faces and your forearms to the elbows and wipe over your heads and wash your feet to the ankles. And if you are in a state of janabah, then purify yourselves. But if you are ill or on a journey or one of you comes from the place of relieving himself or you have contacted women and do not find water, then seek clean earth and wipe over your faces and hands with it. Allah does not intend to make difficulty for you, but He intends to purify you and complete His favor upon you that you may be grateful.
- And remember the favor of Allah upon you and His covenant with which He bound you when you said, "We hear and we obey"; and fear Allah. Indeed, Allah is Knowing of that within the breasts.
- O you who have believed, be persistently standing firm for Allah, witnesses in justice, and do not let the hatred of a people prevent you from being just. Be just; that is nearer to righteousness. And fear Allah; indeed, Allah is Acquainted with what you do.
- Allah has promised those who believe and do righteous deeds [that] for them there is forgiveness and great reward.
- But those who disbelieve and deny Our signs - those are the companions of Hellfire.
05 Verse: 11
- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন এক সম্প্রদায় তোমাদের উপর আক্রমণ করার সংকল্প করেছিল, কিন্তু আল্লাহ তাদের হাত তোমাদের থেকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং মুমিনদের উচিত আল্লাহরই উপর ভরসা করা।
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো…”
মুমিনদের বলা হচ্ছে যেন তারা পেছনের ঘটনাগুলো মনে রাখে — যখন বিপদের সময় আল্লাহ সাহায্য করেছিলেন, শত্রুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন।
“যখন এক সম্প্রদায় তোমাদের উপর আক্রমণের সংকল্প করেছিল…”
- হাদীস ও ইতিহাস অনুযায়ী এটি বনু নাদীর ইহুদি গোষ্ঠীর একটি ষড়যন্ত্র, যারা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।
- কিন্তু আল্লাহ তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেন।
“কিন্তু আল্লাহ তাদের হাত তোমাদের থেকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।”
- অর্থাৎ, তারা যা চেয়েছিল তা করতে পারেনি, কারণ আল্লাহ তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছেন।
“তোমরা আল্লাহকে ভয় করো…”
- সব ঘটনার পেছনে আল্লাহ আছেন — তাই শুধু পরিস্থিতিকে ভয় না করে আল্লাহকেই ভয় করতে হবে, যাতে আমরা ভুল পথে না যাই।
“…এবং মুমিনদের উচিত আল্লাহরই উপর ভরসা করা।”
- ঈমানদারদের আসল ভরসা অস্ত্র, সংখ্যা, চালাকি নয় — বরং আল্লাহর উপর আস্থা। আল্লাহ বলেন, “.....মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপরই ভরসা করা।” (আল ই মরান ৩:১২২)
05 Verse: 12
- নিশ্চয় আল্লাহ বনী-ইস্রাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন এবং তাদের মধ্য হতে বারো জন নেতা নিযুক্ত করেছিলেন আর বলেছিলেন, ‘আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, তোমরা যদি নামায পড়, যাকাত দাও, আর আমার রসূলগণকে বিশ্বাস কর ও তাদেরকে সাহায্য কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তাহলে তোমাদের পাপরাশি অবশ্যই মোচন করব এবং নিশ্চয় তোমাদেরকে বেহেশ্তে প্রবেশাধিকার দান করব; যার পাদদেশে নদীমালা প্রবাহিত। আর এরপরও যারা কুফরি করবে, তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে।
“আল্লাহ বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন…”
এই আয়াত বনী ইসরাঈল (ইসরাঈল সন্তানেরা — যারা ইয়াকুব আঃ এর বংশধর) সম্পর্কে। তাদের প্রতি আল্লাহ অনেক নিয়ামত দান করেছিলেন এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেছিলেন যাতে ঈমান, আমল ও ত্যাগের প্রতিশ্রুতি ছিল।
“আল্লাহ বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন…”
ইয়াকুব (আঃ)-এর ১২ ছেলের বংশানুযায়ী ১২ গোত্র ছিল। আল্লাহ তাদের মধ্যে নেতৃত্ব ব্যবস্থা চালু করেন যাতে দায়িত্বশীলতা থাকে।
“আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, যদি তোমরা…”
আল্লাহ তাদেরকে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত দিয়েছিলেন:
- নামায পড়া
- যাকাত দেওয়া
- আল্লাহর রাসূলদের প্রতি ঈমান আনা
- রাসূলদের সাহায্য করা
- আল্লাহকে “উত্তম ঋণ” দেওয়া অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা — সদকা, জিহাদ, দীন প্রচার ইত্যাদি।
“তাহলে আমি তোমাদের গোনাহ মাফ করব…”
এই শর্ত পূরণ করলে,
- আল্লাহ গোনাহ মাফ করবেন,
- জান্নাত দান করবেন — যেখানে চিরশান্তি ও নদী বহমান থাকবে।
আর এরপরও যারা কুফরি করবে, তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে।
- যে এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে, সে গোমরাহ হয়ে যাবে এবং সরল পথ থেকে দূরে সরে যা বে।
05 Verse: 13
- অতএব, তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করার কারণে আমি তাদের অভিশপ্ত করেছি এবং তাদের হৃদয় কঠিন করে দিয়েছি। তারা (তাওরাতের) বাক্যাবলীর স্থান পরিবর্তন করে এবং যে উপদেশ তাদের দেওয়া হয়েছিল, তার একটি বড় অংশ তারা ভুলে গেছে। আপনি তাদের মধ্যে সবসময়ই বিশ্বাসঘাতকতার কিছু না কিছু দেখতে পাবেন, তবে তাদের অল্প কিছু ব্যতিক্রম। সুতরাং আপনি তাদের ক্ষমা করুন এবং উপেক্ষা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন।
সহজ ব্যাখ্যা:
প্রেক্ষাপট: এই আয়াতটি বনী ইসরাঈলের ব্যাপারে, যারা আল্লাহর কাছ থেকে বারবার নাবী, কিতাব ও নিয়ামত পেয়েছিল কিন্তু অঙ্গীকার ভঙ্গ করে। তারা যে দায়িত্ব পেয়েছিল — তা তারা পালন করেনি। ফলে আল্লাহ তাদেরকে অভিশপ্ত করেন, এবং তাদের অন্তর কঠিন করে দেন।
“তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করার কারণে আমি তাদের অভিশপ্ত করেছি…”
- বনী ইসরাঈল আল্লাহর সঙ্গে এক বিশেষ অঙ্গীকার করেছিল (আগের আয়াতে বলা হয়েছে), কিন্তু তারা তা রক্ষা করেনি।
- তারা নামায-যাকাত ত্যাগ করল, রাসূলদের অমান্য করল, এমনকি অনেককে হত্যা করেছিল।
- এ কারণেই আল্লাহ তাদের প্রতি অভিশাপ দিলেন।
“…তাদের হৃদয় কঠিন করে দিয়েছি” [কুরআনের একাধিক স্থানে বলা হয়েছে—অভিশপ্ত ও গোনাহগারদের অন্তর কঠিন হয়ে যায়। ]
- এই বাক্য বোঝায় যে, তারা আল্লাহর কথা শুনে প্রভাবিত হতো না,
- তাদের অন্তর এত কঠোর হয়ে গেছে যে তারা নসীহত, আল্লাহভীতি বা সত্য গ্রহণে অনাগ্রহী হয়ে পড়ে।
- তারা আর সততা বা অনুশোচনায় ফিরে আসত না।
“তারা তাওরাতের বাক্যাবলী পরিবর্তন করে…”
- তাওরাতের অনেক কথা তারা বিকৃত করে, নিজেদের স্বার্থে অর্থ বদলে দেয়।
- হালালকে হারাম বানানো, বা রাসূলদের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী লুকিয়ে ফেলা—এসব করেছিল।
“উপদেশের বড় অংশ ভুলে গেছে”
- আল্লাহ যে উপদেশ দিয়েছেন, তাদের অনেকে তা ভুলে বা উপেক্ষা করেছে।
“আপনি তাদের মধ্যে সবসময়ই বিশ্বাসঘাতকতা দেখতে পাবেন”
- নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে বলা হচ্ছে যে, আপনি যদি এই জাতির আচরণ দেখেন, তাহলে দেখতে পাবেন তারা বারবার বিশ্বাস ভঙ্গ করছে , বিশেষ করে নবীদের সঙ্গে — তবে সবাই নয় ।
“তবে তাদের অল্প কিছু ব্যতিক্রম”
- সকলেই নয়, কিছু লোক সৎ ছিল, যারা আল্লাহভীরু ও ন্যায়নিষ্ঠ ছিল।
- কিছু ইহুদি ও নাসারা ছিলেন সৎ ও বিশ্বাসযোগ্য, যারা সত্য গ্রহণ করেছেন। যেমন: হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) – যিনি ইহুদি ছিলেন, পরে ইসলাম গ্রহণ করেন।
“সুতরাং আপনি তাদের ক্ষমা করুন ও উপেক্ষা করুন”
- অর্থাৎ, হেদায়াতের জন্য দাওয়াত দিয়ে যান। প্রতিশোধ বা ঘৃণায় নয়, বরং ক্ষমা ও ধৈর্যের সাথে কাজ করুন।